মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিনঃ বাঁশখালীতে শিক্ষক সিন্ডিকেট গড়ে তোলে অবাধে চলছে নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের রমরমা ব্যবসা।সচেতন মহলের অভিযোগ,এসব সিন্ডিকেটের কারণে বন্ধ হচ্ছেনা বাজার নিষিদ্ধ বই।ফলে শিক্ষকদের সহায়তায় গড়ে উঠা সিন্ডিকেট প্রতিবছর হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।বাঁশখালীতে এইসব নিষিদ্ধ বই বিক্রয়ের জন্য করা হয়েছে একটি কমিটি।এই সিন্ডিকেট কমিটি অবাধে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ গাইড বই।
একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়,৫০% কমিশনে এইসব নিষিদ্ধ গাইড বই চট্টগ্রাম নগরীর আন্দরকিল্লা থেকে কিনে নেয়।এরপর বাঁশখালীতে এনে ৩০% কমিশনে বিক্রি করছে সিন্ডিকেটটি।
জানা যায়,১৯৮০ সালের একটি আইনে এইসব বই ছাপা ও বাজারজাত করা পুরোপুরী নিষিদ্ধ করা হয়।কিন্তু এই আইন প্রয়োগ হচ্ছে না বাস্তবে।এই বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচন,নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা ঠেকানো,শপথ গ্রহণ,মন্ত্রী পরিষদ গঠনসহ নানাবিধ কারণে ব্যস্ত আইনশৃংখলা বাহিনী।আর অসাধু চক্রটি সুযোগটা কাজে লাগিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনায় বিক্রি করছে এইসব নোট গাইড বই।
বাঁশখালীর বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,স্কুল থেকেই এসব বই কিনতে অনেক সময় শিক্ষকরা উদ্বুদ্ধ করেন।
শিক্ষকরা ক্লাসে এসে বুকলিষ্ট দিয়ে দেন।ওই লিস্ট অনুযায়ী নোট,গাইড,গ্রামার ও ব্যাকরণ বই কিনতে বলা হয়।ফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই নিদিষ্ট প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের এসব সহায়ক বই কিনতে হয়।
অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা যায়,শিক্ষকদের পরামর্শ অনুযায়ী বই কিনতে হচ্ছে।এসব নোট বা গাইড বই কেনার সময় ভাবারও অবকাশ থাকে না নিষিদ্ধ কিনা।মূলত এক ধরনের বাধ্যকতা থেকেই এসব বই কেনা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,নাপোড়া বাজারের রহমানিয়া লাইব্রেরী,বিসমিল্লাহ্ লাইব্রেরী,প্রেমবাজারের নুর লাইব্রেরী,মিয়ার বাজারের জনপ্রিয় লাইব্রেরী,আমার লাইব্রেরী,বাণীগ্রাম পুরাতন বাজারের লোকনাথ লাইব্রেরীতে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ গাইড বই।এসব লাইব্রেরীতে অনুপম,গ্যালাক্সি,লেকচার,জননী,জুপিটার,দিগন্ত,ক্যামব্রিয়ান,গ্লোবাল,অ্যাপেলো,ক্যাপ্টেন,সুপার,ছাত্রকন্ঠসহ অন্তত ৪০-৪৫টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের বই বিক্রি হচ্ছে।
প্রতিযোগিতার এই বাজারে বেশি ব্যবসা করার জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষকদের ম্যানেজ করছে কমিশন দিয়ে নিষিদ্ধ গাইড বই এর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।ফলে এইসব বই কিনতে অনেক সময় শিক্ষার্থীদের বাধ্যও করা হয়।বাঁশখালীর প্রতিটি বই এর দোকানে গাইড বইয়ের বাণিজ্য চলছে অবাধে।
আর এসব বাণিজ্যের মূল চালিকাশক্তি স্থানীয় স্কুলগুলোর অসাধু শিক্ষক।তারা লাইব্রেরীর সাথে যোগাযোগ রেখে কমিশনের মাধ্যমে নিষিদ্ধ প্রতিষ্ঠানের বই কিনতে বাধ্য করছে।ফলে নিষিদ্ধ হলেও বন্ধ হচ্ছে না,এসব নোট বা গাইড বিক্রি।বছরের শুরুতেই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষকদের আকৃষ্ট করতে নানাভাবে প্রস্তাব দেয়।কখনো বিভিন্ন উপহার দিয়ে নিদিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বই কিনতে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দিতে বলা হয়।কখনো কখনো ঘুষ দেওয়া হয় নগদ টাকা।টাকার পরিমাণ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীভেদে ২০হাজার থেকে লাখও ছাড়িয়ে যায়।এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়কে আসবাবপত্র দিয়ে থাকে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছনুয়া কাদেরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এক অভিভাবক এ প্রতিবেদককে বলেন,"আমাদের এলাকার বই বিতানগুলোতে বিভিন্ন কোম্পানীর নোট গাইড বই বিক্রি হচ্ছে।শ্রেণীভেদে দামের ভিন্নতা রয়েছে।নিষিদ্ধ গাইড বই বিক্রির কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মেধাবিকাশ মারাত্নকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।"
নাপোড়া-শেখেরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর ছাত্র বলেন,"গত বছর যখন ৮ম শ্রেণীতে ওঠলাম, ক্লাস শুরু হওয়ার কিছুদিন পরপরই ক্লাসে এসে স্যার একটি বুকলিষ্ট দিয়ে বললেন,বই কিনলে এই লিস্ট দেখে কিনতে হবে।"
সে আরো জানায়,"স্যার যখন বাধ্যতামূলকভাবে কথাটা বললেন,আমরাও সেই লিষ্ট দেখে বই কিনেছি।"
এব্যাপারে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোমেনা আক্তার মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন,"আমরা বাঁশখালীর প্রত্যেক স্কুলের টিচারদের নির্দেশ দিয়েছি গাইড বইয়ের মাধ্যমে পাঠদান না করার জন্য।কোন স্কুলের টিচার যদি গাইড বই বিক্রিতে সহযোগিতা করে,স্কুলের নাম ও অভিযুক্ত টিচারের নাম পাঠান।সুনিদিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।"
0 মন্তব্যসমূহ