মোহাম্মদ এরশাদঃ
আমার সঙ্গে বুলবুলের পরিচয় হয় ১৯৭৮ সালের দিকে। ওই সময় বিভিন্ন স্টুডিওতে বা গানের আড্ডায় কথা হতো আমাদের। কবে, কীভাবে পরিচয় হয়েছে, সেটা এখন আর মনে নেই। তবে এতটুকু মনে আছে, আমাদের কলবাগানের লেক সার্কাসের বাসায় বুলবুল প্রায়ই আসত। তখন আমাকে বলত, ‘আপনার জন্য কিছু গান করেছি, একটু শুনতে হবে।’ কিন্তু শোনার সুযোগ সহজে মেলে না। এই করে অনেক দিন পার হয়ে গেল। একদিন সুযোগ মিলল। বুলবুলকে ডেকে শুনতে বসে গেলাম। বেশির ভাগই দেশের গান। দেশের গানও এমন হতে পারে! আমি অভিভূত হয়ে যাই। এরপর তার গানগুলো দিয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশনে একটা অনুষ্ঠান করলাম পরের বছর। অনুষ্ঠানটা ব্যাপক সাড়া ফেলে। তারপর নিয়মিতভাবে কয়েক বছরই তার গান দিয়ে টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করেছি। সবার একটা আগ্রহ থাকত অনুষ্ঠানটা নিয়ে।
আমার আর বুলবুলের মধ্যে গান নিয়ে বোঝাপড়াটা হতো খুব ভালো। আমার প্রতি তার একটা বিশ্বাস ছিল। বুলবুলের ধারণা ছিল, ‘তার গানের কথা, সুর—সবই আমি ভালো বুঝতে পারি। আমাকে প্রায়ই বলত, আপনি গাইলে আমার কোনো চিন্তা থাকে না। যেভাবে চাই, সেভাবেই পাই।’ আর আমি দেখতাম, তার গানের সবচেয়ে বড় শক্তিটা হলো, গান চোখের সামনে দেখতে পারা। গানের প্রতিটি কথা আমি চোখের সামনে দেখতে পারতাম। তবে শুধু দেশের গানেই নয়, চলচ্চিত্রের গানেও ছিল তার সমান অংশগ্রহণ।
ব্যক্তিগতভাবে আমাদের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। তার পরিবারের সবার সঙ্গেই আমার যোগাযোগ ছিল। গত বছরও বুলবুলের সুরে গান করেছি। মাঝেমধ্যে তো কথা হতো। বুলবুলের যে বিষয়টা আমাকে মুগ্ধ করত বারবার, সেটি হলো অত অল্প বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া। শুনেছি, মৃত্যুর কাছাকাছি গিয়ে ওই সময় ফিরে এসেছে সে। সেবার ফিরে এলেও এবার ফিরতে পারল না। একজন ক্ষণজন্মা হিসেবে বিদায় নিল বুলবুল।-প্রথম আলো
0 মন্তব্যসমূহ