ছনুয়ায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজে নেই কোন গতি

বাঁশখালীর উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজের দ্বিতীয় মেয়াদে সময় বৃদ্ধির পরও চলতি মাসের জুনে শেষ হলে ও কাজের শেষ হচ্ছে না। বিশেষ করে বাঁশখালীর সর্ব দক্ষিনের ইউনিয়ন ছনুয়ায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজের নাজুক অবস্থা। ছনুয়া ৩২০০ মিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজের মধ্যে ২৫শ ৫০ মিটার মশিউর রহমান এন্টারপ্রাইজ এবং সাড়ে ৬শ মিটার পায় মোস্তফা এন্ড সন্স। ৩২শত মিটার কাজের মধ্যে এখন পর্যন্ত দুই ঠিকাদার মিলে ১ হাজার মিটার কাজ শেষ করেনি বলে স্থানীয় জনগণের অভিযোগ। ৬টি প্যাকেজে নেওয়া এ কাজের মধ্যে ৩টি প্যাকেজ বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। আর বাকি কাজ শেষ করার জন্য চলতি ফেব্রয়ারি মাসের ১৭ তারিখ পর্যন্ত সময় নির্ধারন করে দিয়েছে। তার মধ্যে সেসব কাজ শেষ করতে না পারলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলেন জানান পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
এদিকে কাজের ব্যাপারে মোস্তফা এন্ড সন্স এর দায়িত্ব রক ঠিকাদার মো: ফারুক চৌধুরী বলেন ,আমাদের কাজটা নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করব । তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় কাজে নানা ধরনের ভোগান্তি ও সময় ক্ষেপন হয়। অপরদিকে কাজের অগ্রগতি ও সার্বিক বিষয় নিয়ে জানার জন্য মশিউর রহমান এন্টারপ্রাইজ এর দায়িত্বশীল মো: হামিদ এর কাছে জানতে চাইলে তিনি কাজের অগ্রগতির ব্যাপারে অবগত নয় এবং কোন তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। বাঁশখালীর উপকূলীয় বেড়িবাধেঁর কাজ যথানিয়মে হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য গত ১ ফেব্রয়ারি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কাজ এলকা পরিদর্শন করেন। বাঁশখালীর বেড়িবাঁধ নির্মান কাজের চলতি বছরের জুনে মেয়াদ শেষ হলেও কাজের শেষ না হওয়ায় আবারো নতুন করে কাজের সময় নির্ধারণ হতে পারে বলে জানা যায় । বাঁশখালীবাসীর দীর্ঘদিনের মরণ ফাঁদের কবল থেকে রক্ষা সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধরীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য সরকার ২শ ৫১ কোটি ২৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন সেকশনে নির্মাণ কাজের বরাদ্দ প্রদান করা হয়। ২০১৫ সালের মে থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে। জানা যায়, বাঁশখালীতে সরকারের কয়েকটি বৃহৎ প্রকল্প রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রকল্প হলো বাঁশখালীর উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণ। ২৫১ কোটি ২৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই বাঁধের (সী ডাইক) ঢাল সংরক্ষণসহ ব্রীচ কোজিং ও পুনরাকৃতিকরণ ৯.৯০০ কি.মি, নদী তীর সংরক্ষণ কাজ ৩.৮৪৮ কি. মি., বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ-২.০০০ কি.মি. কাজ করা হবে উক্ত টাকা ব্যয়ে। ২০১৫ সালের মে থেকে শুরু করে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত এই কাজের মেয়াদ রাখা হলেও কাজ শুরু হয়েছে সকল প্রক্রিয়া শেষে বিগত ২০১৬ সালের শেষ পর্যায়ে এসে।আর তার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তৎকালীন পানি সম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও বাঁশখালীর সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধরী ২০১৭ এর ১৭ মার্চ । বিশাল এই কাজটি বেশ কয়েকটি প্যাকেজে ঠিকাদারগণ কাজ বন্টন করে নেওয়ায় একেক ঠিকাদার একেক নিয়মে তাদের কার্যক্রম করে যাচ্ছে। বাঁশখালীর সাধনপুর ইউনিয়নের ২১৭৯ মিটার নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ পায় হাছান এন্ড ব্রাদার্স। অপরদিকে পুকুরিয়া ইউনিয়নের ১২৬৯ মিটার নদীর তীর ও সংরক্ষণ বাঁধের কাজ পায় ৮শ মিটার হাসান ব্রাদার্স, ৪৬৯ মিটার নিয়াজ ট্রেডার্স। অপরদিকে খানখানাবাদ এলাকায় ৪শ মিটার তীর সংরক্ষণ বাঁধের কাজ পায় হাসান ট্রেডার্স এবং ৪ হাজার ৫শ মিটার ঢাল সংরক্ষণ বাঁধ কাজ। বাহারছড়া ৫শ মিটার বাঁধের কাজ পায় হাছান ব্রাদার্স, গন্ডামারায় ১৪শ মিটারের মধ্যে ৯শ মিটার কাজ পায় আরাধনা এন্টার প্রাইজ এবং ৫শ মিটার পায় মশিউর রহমান চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ। অপরদিকে ছনুয়া ৩২০০ মিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজের মধ্যে ২৫শ,৫০ মিটার মশিউর রহমান এন্টারপ্রাইজ এবং সাড়ে ৬শ মিটার পায় মোস্তফা এন্ড সন্স। ছনুয়ায় কাজের দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ড়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো: মনজুরুল হক জানান ছনুয়ায় ৬ টি প্যাকেজে কাজ পাওয়া মশিউর রহমান এন্টারপ্রাইজ এর কাজে গতি না থাকায় তাদের ৩ টি কাজের প্যাকেজ বাতিল করা হয়েছে ।তারা যথানিয়মে কাজ না করায় অনেক সমস্যা হওয়াতে তাদের প্রয়োজনীয় সময়ে ও পাওয়া যায় না। ছনুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম.হারুনুর রশিদ বলেন বেড়িবাঁধের কাজে নানা অনিয়মের ফলে বর্ষায় আবারো পানিতে ডুববে ছনুয়াবাসী। যথাসময়ে কাজ না করা এবং লবণাক্ত পানিতে ব্লক করা, কাজের মান ঠিক না রাখা সব মিলিয়ে উপকূলবাসীর স্বপ্নের বেড়িবাধঁ মরণ ফাঁদে পরিণত হচ্ছে । তিনি বেড়িবাধেঁর কাজে যথানিয়মে শেষ করার জন্য বাঁশখালীর সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীসহ পানি উন্নয়ন বোর্ড়ের কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। পাউবো উপ-বিভাগীয় কর্মকর্তা মোঃ নুরুল ইসলাম জানান বর্তমানে কাজের ৭১ শতাংশ শেষ হয়েছে। আমাদের চলমান কাজের মধ্যে ছনুয়ার কাজ ছাড়া অন্যান্য কাজ গুলো যথানিয়মে চলছে। ছনুয়ার কাজের ৮ টি প্যাকেজের মধ্যে মশিউর রহমান এন্টারপ্রাইজএর ৬টি প্যাকেজের মধ্যে ৩ টি বাতিল করা হয়েছে । বাকি কাজ গুলো ১৭ ফেব্রায়ারির মধ্যে যথানিয়মে না করলে তার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপরদিকে প্রেমাশিয়া ও খানখানাবাদ। এলাকায় ব্লক বসাতে যে সমস্যা হয়েছে তা নতুন করে ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে।

/আজাদী! 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ