শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের ভাষার অধিকার, আমাদের সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে রক্ষার চর্চাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করা আমাদের কর্তব্য। আমরা অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেটা অর্জন করেছি, তার সুফলটা যেন আগামী প্রজন্ম ভোগ করতে পারে, তারা যেন একটা সুন্দর জীবন পায়, সেটাই আমরা চাই।’
একুশে পদক বিজয়ীদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আজকে যাঁরা একুশে পদক পেয়েছেন, তাঁরা গুণীজন। তাঁরা স্ব-স্ব ক্ষেত্রে কীর্তিমান, তাঁদের বিশাল অবদান রয়েছে। সেই অবদানের কথা সব সময়ই আমরা স্মরণ করি এবং আমি মনে করি, আমাদের আগামী দিনের প্রজন্মও তাঁদের অনুসরণ করে নিজেদের গড়ে তুলবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বাঙালি জাতি, বাংলাদেশ আমাদের দেশ, বাংলা আমাদের ভাষা—যে কথা জাতির পিতা বারবার বলে গেছেন। সেই দেশকেই আমরা গড়ে তুলতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের দরবারে একটি মর্যাদার আসনে বাংলাদেশ যেন অধিষ্ঠিত হয় এবং বাঙালি জাতি যেন বিশ্বসভায় সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে চলতে পারে, সেটা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।’
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নিজ নিজ ক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ২১ জন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদক ২০১৯-এ ভূষিত করেন। ৬ ফেব্রুয়ারি সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় এই পদক বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে।
এ বছরের একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন: ভাষা আন্দোলনে অবদানের জন্য অধ্যাপক হালিমা খাতুন (মরণোত্তর), যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি গোলাম আরিফ টিপু এবং অধ্যাপক মনোয়ারা ইসলাম। ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য একুশে পদক পেয়েছেন মহান মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকার জন্য।
প্রয়াত পপশিল্পী আজম খান (মরণোত্তর) ও নজরুলসংগীতশিল্পী খায়রুল আনাম শাকিলের সঙ্গে এবার সংগীত বিভাগে এ পুরস্কার পান গায়ক সুবীর নন্দী।
সুবর্ণা মুস্তাফার সঙ্গে লাকী ইনাম ও লিয়াকত আলী লাকী একুশে পদক পান অভিনয়ের জন্য।
দেশের প্রথম নারী আলোকচিত্রী সাইদা খানম আলোকচিত্রে অবদানের জন্য এবং চিত্রশিল্পী জামাল উদ্দিন আহমেদ চারুকলায় এ পুরস্কার পান।
গবেষণায় ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ ও ড. মাহবুবুল হক এবং শিক্ষায় ড. প্রণব কুমার বড়ুয়াকে এ পদক প্রদান করা হয়।
এ ছাড়া ভাষা সাহিত্যে রিজিয়া রহমান, ইমদাদুল হক মিলন, অসীম সাহা, আনোয়ারা সৈয়দ হক, মইনুল আহসান সাবের ও হরিশংকর জলদাস একুশে পদক পান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের হাতে পদক তুলে দেন এবং মরণোত্তর একুশে পদক বিজয়ী মরহুম অধ্যাপক হালিমা খাতুনের পক্ষে তাঁর কন্যা প্রজ্ঞা লাবণী এবং পপসম্রাট আজম খানের পক্ষে তাঁর কন্যা ইভা খান পুরস্কার গ্রহণ করেন।
সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. আবু হেনা মুস্তফা কামাল স্বাগত বক্তব্য দেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এবং পদক বিজয়ীদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি পাঠ করেন।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সরকারের উপদেষ্টা, সাংসদ, বিচারপতি, পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিল্পীসহ বিশিষ্ট নাগরিক, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, আগের একুশে পদক বিজয়ী ব্যক্তি এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
পুরস্কার হিসেবে প্রত্যেককে ৩৫ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণপদক, এককালীন দুই লাখ টাকা ও একটি সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়।
ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে সরকার ১৯৭৬ সাল থেকে প্রতিবছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এই পুরস্কার দিয়ে আসছে। এ পর্যন্ত ৪৫৭ জন ব্যক্তি ও তিনটি প্রতিষ্ঠানকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়েছে।
0 মন্তব্যসমূহ