প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশস্ত্র বাহিনীকে দেশের স্বাধীনতা ও
সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি ভবিষ্যতেও দেশ ও জাতির
উন্নয়নে এবং গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক স্থিতিশীলতায় আরও অবদান রাখতে
সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ
সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা সততা ও পেশাগত দক্ষতার মাধ্যমে সুনাম ও সুখ্যাতি
অর্জন করেছেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সশস্ত্র বাহিনীর সফলতায় সারা
বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকায় মিরপুর ক্যান্টনমেন্টে ডিফেন্স সার্ভিসেস
কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে
ডিএসসিএসসি ২০১৮-২০১৯ কোর্সের গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে ভাষণকালে
প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। কলেজের কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মো.
এনায়েত উল্লাহ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সশস্ত্র বাহিনীর সাফল্য দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল
করেছে। ভবিষ্যতেও দেশ ও জাতির কল্যাণে এবং গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক ধারা
অব্যাহত রাখতে তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন, যাতে আমরা উন্নয়নের
ধারা এগিয়ে নিতে পারি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, সশস্ত্র বাহিনী হচ্ছে দেশের
স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও
সার্বভৌমত্ব রক্ষার মহান দায়িত্বের পাশাপাশি দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীর
সদস্যরা দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রশংসনীয় অবদান রাখছেন। দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন
কার্যক্রম, অবকাঠামো নির্মাণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও তাঁদের
অবদান প্রশংসনীয়। বর্তমানে বিশ্ব নিরাপত্তাব্যবস্থায় নতুন নতুন পরিবর্তনের
ফলে সামরিক বাহিনীর ভূমিকা ও দায়িত্বে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। সামরিক
বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয়
গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ বাংলাদেশের
একটি ঐতিহ্যবাহী ও স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান। এ বিদ্যাপীঠ থেকে পিএসসি ডিগ্রি
অর্জন যেকোনো সামরিক কর্মকর্তার জন্য অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। আজ যাঁরা
সাফল্যের সঙ্গে কোর্স সম্পন্ন করে গ্র্যাজুয়েট হলেন, তাঁদের সবাইকে
আন্তরিক অভিবাদন। আমি একই সঙ্গে আপনাদের জীবনসঙ্গীদেরও অভিনন্দন জানাচ্ছি।
আপনাদের এ সাফল্যের পেছনে তাঁদেরও অনেক অবদান আছে।’
প্রধানমন্ত্রী গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে বলেন, ‘কঠোর পরিশ্রম ও
অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তোমরা সমরবিজ্ঞানের ওপর উচ্চতর জ্ঞান লাভ করেছ। এ
প্রশিক্ষণ অর্পিত দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালনে এবং যেকোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ
মোকাবিলায় তোমাদের আরও আত্মপ্রত্যয়ী হতে শেখাবে। ভবিষ্যতে বৃহত্
নেতৃত্ব প্রদানে তোমরা নিজেদের প্রস্তুত রাখবে। সততার সঙ্গে অর্পিত
দায়িত্ব পালন করে যাবে।’ এ বছর মোট ১১ জন নারী কর্মকর্তা গ্র্যাজুয়েট
হয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিবছর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী
কর্মকর্তার কোর্সে অংশগ্রহণ অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। আশা করি তাঁদের অংশগ্রহণ
ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে।’
এই কোর্সে অংশ নেওয়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের উপস্থিতি স্টাফ কলেজকে আরও বেশি অলংকৃত করেছে। নিজ
নিজ দেশে ফিরে আপনারা আমাদের শুভেচ্ছা এবং দেশের নৈসর্গিক সৌন্দর্য ও
অতিথিপরায়ণ জনগণের কথা আপনাদের দেশের জনগণের কাছে পৌঁছে দেবেন।’
নানা উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সরকারের উন্নয়ন
কার্যক্রমে সন্তুষ্ট হয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ আবারও বিপুল
ভোটে আমাদের নির্বাচিত করেছে। আমরা জনগণকে দেওয়া প্রতিটি ওয়াদার পরিপূর্ণ
বাস্তবায়ন করব। আমরা ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের
জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। ২০২১
সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশে
পরিণত করব।’
মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, ভারপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর
প্রধান, নৌবাহিনীর প্রধান ও বিমানবাহিনীর প্রধান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের
প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের
উপাচার্য, বিদেশি কূটনীতিক এবং ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা এ
সময় উপস্থিত ছিলেন।
0 মন্তব্যসমূহ