রহিম সৈকতঃ মার্ক জাকারবার্গ এমন জিনিস বানালেন যেখানে জগতের সকল জনগোষ্ঠী আসতে বাধ্য হচ্ছে।কি ফকির, কি মিসকিন, কি আশরাফ, কি আতরাফ, কি সমাজসেবী কি সমাজবিরোধী সবাই জড় হয়েছে। এক একটা আইডি যেন এক একটি ঘর। কয়েক ঘর মিলে যেন একটি গ্রাম।
বাস্তব জগতে সত্যের সাথে মিথ্যে যায়না। কুৎসিত এর সাথে সৌন্দর্যের যুগ জনমের আড়ি। মানবতার সাথে স্বার্থান্ধতার আজন্ম বৈরীতা। কিন্তু ফেসবুক তথা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো এসব টার্মস এর প্রথাসিদ্ধ নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে গুড়িয়ে দিয়েছে। আপনি নিজেই জানেন না আপনার ফ্রেন্ডলিস্টে সরল সৌম্য যুবকের প্রোপিক দিয়ে লুকিয়ে থাকা মানুষটি কি পরিমাণ ভয়ানক অপরাধী। আবার সবসময় তীর্যক আর বিদ্রোহের ভাষায় যে যুবকটি ফেসবুক দেয়ালে নিত্য বিদ্রোহী স্ট্যাটাস পয়দা করে সে আসলে এতটা লাজুক যে আপনার সামনে কথা বলতে গেলেই মিইয়ে আসবে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ এর বদৌলতে সে নিজকে নতুন ভাবে গড়তে, ভাঙ্গতে শিখছে।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম যে ইতিবাচক দিক গুলো সামনে চলে এসেছে তা হল শিক্ষা ব্যবস্থায় গতিলাভ। এই প্ল্যাটফরমটি ব্যবহার করে যে কেউ গ্রুপ খুলে সমমনা দের নিয়ে নিজেদের ভেতর সমস্যা গুলো নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করতে পারে। এবং তা পৃথিবীর যেকোন জায়গা হতে সম্ভব।
এখন তো টেলিকম ব্যবসায়ও হাত দিয়েছে ফেসবুক। বাংলাদেশের বর্তমানে ১৫% কল হচ্ছে ফেসবুকের মেসেঞ্জার ব্যবহার করে। এই সাথে ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, স্কাইপি দিয়ে আরো হচ্ছে প্রায় ৩০/৪০%। কি বুঝলেন? এক সময়ের জমজমাট মোবাইল রিচার্জের দোকান ধিরে ধিরে হারিয়ে যাচ্ছে। মোবাইল অপারেটর এর টকটাইম বিক্রি বন্ধ হতে যাচ্ছে। তাদের বাধ্য হয়ে ডাটা বিক্রিতে আসতে হচ্ছে। এভাবেই অনেক কিছু হারিয়ে যাচ্ছে। জায়গা করে নিচ্ছে নতুন কিছু।
বলছিলাম ফেসবুকের কথা, যে ফেসবুকের জন্ম হয়েছিল জাকারবার্গ এর বান্ধবি ফ্রিসিলার সাথে যোগাযোগ করার জন্য।বেচারী হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একপ্রান্তে জাকারবার্গ একপ্রান্তে এত বিরহ কি প্রাণে সয়?মূলত হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের অনলাইনে এক জায়গায় আনার পরিকল্পনা থেকে শুরু হয় ফেসবুকের যাত্রা।
কয়েকজন বন্ধু বসেই বানিয়ে পেললেন একটি তাৎক্ষণিক যোগাযোগের মাধ্যম। সেই ফেসবুক আজ প্রায় বিশ্বের ১৭০ কোটি মানুষের অবিসংবাদিত প্ল্যাটফর্ম। ব্যবসা করবেন ফেসবুক ছাড়া উপায় নেই। পৃথিবীর বিশাল মার্কেট প্লেস।তথাকথিত বিজ্ঞাপন এর বাজার সংকুচিত হয়ে আসবে আগামী কয়েক বছরে। বিজ্ঞাপনের বড় বাজার হতে যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো। নেতৃত্বে আছে গুগোল আর ফেসবুক। আগামী কয়েক বছরে স্যাটেলাইট টেলিভিশনের ধারনাও বদলে যাবে। বদলে যাবে সাংবাদিকতার ধারনাও। সেখানে জায়গা করে নিবে অনলাইন তথা ইউটিউব চ্যানেল, সিটিজেন সাংবাদিকতা। আগে এসব ছিল মনোপলি ব্যবসা, যা লেখতেন তাই পড়তে হত, যা দেখাতেন তাই দেখাতে হত। পেছনেও যে গল্প থাকে, থাকতে পারে তা দেখার সুযোগ ছিল না। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সে মনোপলি ব্যবসায় হাত দিয়ে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়ে এসবের ভবিষ্যৎ। যারা চতুর আছে তারা আগেই ঠের পেয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার কাজ সেরে নিয়েছেন পরিবর্তিত মাধ্যমে। ফলে তাদের দেখে অনেকে নিজেদের খাপখাইয়ে নিতে কাজ শুরু করে দিয়েছেন।তাই বলা যায় ইচ্ছাতে হোক অনিচ্ছাতে হোক আসতে বাধ্য হচ্ছে। যে লোকটি সারাদিন এসবের সমালোচনা করেন তিনিও চুপিচুপি ঘুরে বেড়ান ফেসবুকের অলিতে-গলিতে। আজ ফেসবুকের জন্মবার্ষিকী। সামাজিক যোগাযোগের এই জনপ্রিয় ওয়েবসাইট আজ ১৬ বছরে পা দিচ্ছে। ২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু হয় ফেসবুকের। ১৫ বছর পূর্ণ করা ফেসবুকের যাত্রা শুরু হয় এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গের হাত ধরে। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ডরম রুমে ‘দ্য ফেসবুক’ নামে শুরু হওয়া এ ওয়েবসাইটের বর্তমান ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১৭০ কোটি।
১০ বছর শেষে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির বাজারমূল্য প্রায় ৬৮ বিলিয়ন ডলার! সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, সারা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার সাত ভাগের এক ভাগ প্রতি মাসে অন্তত একবার হলেও ফেসবুক ব্যবহার করে। বিপুলসংখ্যক ব্যবহারকারীর ফেসবুকের দেয়ালে সর্বশেষ হালনাগাদ, ছবিসহ কন্টেন্ট রয়েছে এক ট্রিলিয়নেরও বেশি। আর এসব কন্টেন্টকে ফেসবুকের গ্রাফ সার্চের মাধ্যমে সাজানোর চেষ্টাও করা হচ্ছে।
0 মন্তব্যসমূহ