স্থানীয় মানুষজনের মতে, সুড়ঙ্গটির দৈর্ঘ্য সাড়ে তিন শ ফুট। এর ৭০ ফুট যাওয়া যায় হেঁটে। এরপরই হামাগুড়ি দিতে হয়। আছে এক বড় বৈঠকখানা। সেখানে আবার চারটি সুড়ঙ্গপথ। দেয়ালে আছে নানা ছবি। এমন অনেক জানা, অজানা রহস্য নিয়ে পড়ে আছে কক্সবাজারের রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের উখিয়াঘোনা পাহাড়ের আজব সুড়ঙ্গটি।
সুড়ঙ্গটিকে স্থানীয় লোকজন চেনেন, ‘কানা রাজার সুড়ঙ্গ’ কিংবা ‘আঁধারমানিক’ নামে। অন্ধকার রাতে এই সুড়ঙ্গের প্রবেশমুখ মানিকের মতো জ্বলজ্বল করত বলেই এটির নামকরণ হয়েছে ‘আঁধারমানিক’।
১৯৯০ সালে জেলা প্রশাসনের অর্থায়নে প্রকাশিত কক্সবাজারের ইতিহাস গ্রন্থে এই সুড়ঙ্গের বর্ণনা আছে। বলা হয়, জনৈক মগ সম্প্রদায়ের কানা রাজা (এক চোখ অন্ধ) যখন এ অঞ্চল শাসন করতেন, তখন নিজের আত্মরক্ষার্থে সুড়ঙ্গ নির্মাণ করেছিলেন। তবে রাজা কখন দেশ শাসন করেছিলেন, তার তথ্য নেই।
রামু উপজেলার সদরের চৌমুহনী থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে (রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়ক) কাউয়ারখোপ বাজার। বাজার থেকে বাম দিকে কিছুদূর গেলে ‘কাউয়ারখোপ হাকিম রকিমা উচ্চবিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের পূর্ব দিকে আরও তিন কিলোমিটার গেলে সামনে পড়ে ৭০-৮০ ফুট উঁচু একটি পাহাড়। এই পাহাড়ের নিচেই ‘কানা রাজার সুড়ঙ্গ’। সুড়ঙ্গটির মুখের প্রস্থ ৭ ফুটের কাছাকাছি। ভেতরে আরেকটু বেশি।
সম্প্রতি সুড়ঙ্গ এলাকায় গিয়ে বেশ কিছু পর্যটকের উপস্থিতি দেখা যায়।
গত বছরের এপ্রিলে সুড়ঙ্গটির ভেতরে প্রায় ৩৫০ ফুট ঘুরে আসেন রামুর চিত্রশিল্পী তানভীর সরওয়ার। তিনি কক্সবাজার আর্টক্লাবের সভাপতি। তানভীর সরওয়ার প্রথম আলোকে বলেন, সুড়ঙ্গের মুখ থেকে প্রায় ৭০ ফুট তিনি হেঁটে যেতে পেরেছেন। অবশিষ্ট সুড়ঙ্গের পথ তাঁকে হামাগুড়ি দিয়ে যেতে হয়েছে। ৬০ ফুট দূরত্বে তিনি দেখতে পেয়েছেন ২৫ ফুট লম্বা ও ২৫ ফুট প্রস্থের একটি বৈঠকখানা। বৈঠকখানার চারদিকে চারটি সুড়ঙ্গপথের দুটি গেছে পাহাড়ের ওপরের দিকে, অন্য দুটি গেছে নিচের দিকে। মাটি জমে সুড়ঙ্গপথগুলো ভরাট হয়ে গেছে। সুড়ঙ্গের দেয়ালে দেখা গেছে নানা ধরনের আঁকাআঁকি। গুহার ভেতরে অসংখ্য বাদুড়, কীটপতঙ্গে ভরা।
তানভীর সরওয়ার বলেন, সুড়ঙ্গটি দেখে তিনিও বিস্মিত হয়েছেন। এটি কেবল সুড়ঙ্গ নয়, শত বছরের ইতিহাস। সুড়ঙ্গটি সংরক্ষণ জরুরি।
কাউয়ারখোপের উখিয়াঘোনার বাসিন্দা ও কক্সবাজার জেলা পরিষদের সদস্য শামসুল আলম বলেন, তাঁর গ্রাম থেকে একটু দূরেই এ কানা রাজার সুড়ঙ্গ। ছোটবেলায় তিনি কয়েকবার স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে ওই সুড়ঙ্গে ঢুকেছিলেন। তখন তিনি প্রায় ১০০ ফুট ভেতরে গিয়েছিলেন। সুড়ঙ্গের ভেতরে তিনি একটি রঙ্গশালা বা মঞ্চ দেখেছেন। এটিকে অনেকে বিশ্রামাগারও বলতেন। একসময় এখানে চৈত্রসংক্রান্তি উৎসব চলত।
স্থানীয় হাকিম রকিমা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কিশোর বড়ুয়া বলেন, গত বছর কয়েক দফায় শ্রমিক নিয়োগ করে পাহাড়ের জঙ্গল পরিষ্কার ও ভরাট মাটি সরিয়ে সুড়ঙ্গটি লোকজনকে দেখানোর বন্দোবস্ত করা হয়। এখন প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ সুড়ঙ্গটি দেখতে যাচ্ছেন। এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনটি সংরক্ষণ করা গেলে পর্যটকের আগমন বাড়বে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, সুড়ঙ্গসহ জেলায় যে পুরার্কীর্তি রয়েছে, সেগুলো সংরক্ষণের জন্য অতি সম্প্রতি তিনি পর্যটনমন্ত্রীর নজরে এনেছেন। পুরাকীর্তিসংশ্লিষ্ট এলাকার রাস্তাঘাট নির্মাণসহ পর্যটকদের সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তাভাবনা করছেন তাঁরা।
/প্রথম আলো!
0 মন্তব্যসমূহ