ধূলায় ধূসর বাঁশখালী

নাক চেপে, মুখ ঢেকেও চলাচল করা দায়। শরীরে জড়ানো পোশাক নিমিষেই বিবর্ণ। একমাত্র প্রধান সড়কেই ধূলা-বালির প্রকোপ। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি, শিশুসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে ধূলা। সংস্কারের নামে সড়ক খুঁড়ে ফেলে রাখায় একদিন-দু’দিন নয়, গেল ৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে এমন দুর্ভোগে নাকাল বাঁশখালীবাসী। নাক মুখ ঢেকে পথ চলছে নিরুপায় মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সড়কের দুইপাশের ব্যবসায়ীরা। তবুও ভ্রæক্ষেপ নেই সওজ বিভাগ ও ঠিকাদারের।
দোহাজারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহেদ হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, ‘লোকাল ঠিকাদার কাজ করছিল বলে নানা জটিলতা ছিল। এখন থেকে মূল ঠিকাদার কাজ করবে। মাসখানেকের মধ্যেই কাজ দৃশ্যমান হবে। কাজের মেয়াদ দেড় বছর আছে। ভূমি অধিগ্রহণসহ কিছু জটিলতা ছিল। এখন ধূলাবালি নিয়ন্ত্রণে সওজের নিজস্ব ট্যাঙ্কার দিয়ে পানি ছিটানো হচ্ছে। ঠিকাদার আমাদের কথা দিয়েছেন দ্রæত কাজ করবেন। এতদিন অর্থনৈতিক কারণে উনি কিছুটা বেকায়দায় ছিলেন। আমরাও বিল ছাড়ি নাই।’
জানা যায়, বাঁশখালীর প্রায় আট কিলোমিটার সড়ক সংস্কার হবে। এসড়ক সংস্কারে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) ঠিকাদারকে সময় বেঁধে দিয়েছে ৫৪০দিন। গত ৪ এপ্রিল এ সংক্রান্ত কার্যাদেশ পেয়েই কাজ শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বাঁশখালীর প্রধান সড়কের সাতটি বাজার অংশে ২৭ কোটি টাকার মূল্যের এ কাজ করছে রানা, হাছান বিল্ডার্স ও সালেহ আহমদ নামক জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি। কাজ শুরুর পর থেকেই পাহাড়ের মাটি ব্যবহার, ক্রটিপূর্ণ সম্প্রসারণ, সাইনবোর্ড না টাঙানোসহ যথানিয়মে কাজ না করার অভিযোগ এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। সওজের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সাথে সুসম্পর্ক রেখে এবং সরকার দলীয় নেতাদের নাম ভাঙিয়ে অনিয়ম করেই যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে ভিন্ন কথা বলছেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রানা, হাছান বিল্ডার্স ও সালেহ আহমদ জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানির কর্মকর্তা সবুর খান লিটন পূর্বদেশকে বলেন, ‘ফান্ড না থাকায় কাজ বন্ধ। নির্বাচনের কারণে ফান্ড দিচ্ছে না। সওজ ফান্ড দিচ্ছে না। এরপরেও আমরা পানি ও রোলার দিয়ে কাজ চালাচ্ছি। মাটির কাজ চলছে। ফান্ড পেলেই কাজ শুরু হবে।’
সওজ সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরে বাঁশখালীর সড়ক প্রশস্তকরণ কাজের প্রকল্প তৈরি করা হয়। পরে তিন কোটি টাকা বাদ দিয়ে ২৭ কোটি টাকায় প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। পুকুরিয়া থেকে সাধনপুর পর্যন্ত বাঁক সোজাকরণ ছাড়াও গুনাগরী, বৈলছড়ী, চেচুরিয়া, মিয়ার বাজার-সদর, চাম্বল, নাপোড়া, প্রেমবাজার অংশে সাত দশমিক ৮৫০ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার করা হবে। এসব অংশে সড়কের দুই পাশে তিন ফুট করে প্রশস্ত করা হবে। বাঁক থাকা অংশ সোজায় সর্বোচ্চ ছয়ফুট প্রশস্ত করা হবে। সড়ক প্রশস্তকরণে দুইপাশে বালির আস্তরণ (আইএসডি) এক ফুট, ১০ ইঞ্চি করে বালি ও খোয়ার মিশ্রণ (সাব বেইজ) দিয়ে গর্ত ভরাট করা হবে। পরে মূল সড়কে থাকা আগের বিটুমিনের আস্তরণ তুলে আট ইঞ্চি পাথরের লেয়ার (টাইপ-১) দিয়ে সড়কটি প্রস্তুত করার কথা।
দোহাজারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী তাহমিনা বিনতে ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ খুঁটিগুলো সরালেই কাজ করতে সুবিধা হবে। আমরা বিষয়টি পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। কিছুদিনের মধ্যেই কাজ শেষ হবে। ঠিকাদারকেও চাপে রেখেছি। প্রতিনিয়ত কাজের তদারকি করছি। এরপরেও ঠিকাদারের কিছু সমস্যাতো আছেই।’ ফান্ড না ছাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কাজ করলেই টাকা দিব। বাকিতে কেউ কাজ করবে না।’
/পূর্বদেশ!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ