ঠাকুরগাঁওয়ে অজ্ঞাত রোগে একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনাটি প্রকৃতপক্ষে ছিল নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যুর ঘটনা। রবিবার (৩ মার্চ) রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আইইডিসিআর, আইসিডিডিআর,বি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যৌথ উদ্যোগে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পরিচালিত ডিজিজ সার্ভিল্যান্স গত ২৪ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুর ঘটনায় অনুসন্ধান করেছে। এই তদন্ত দল গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতাল, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তদন্তকাজ পরিচালনা করে।
এ সময়ে তদন্ত দলটি হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্য কর্মী ও মৃত ব্যক্তিদের পরিবারবর্গ, প্রতিবেশী, গ্রামবাসীদের কাছ থেকে তথ্য উপাত্ত ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নমুনা সংগ্রহ করে।
এরপর রোগের কারণ অনুসন্ধান করে জানা যায়, মৃত ব্যক্তিদের সকলের জ্বর, মাথাব্যথা, বমি ও মস্তিষ্কে ইনফেকশনের (এনসেফালাইটিস) উপসর্গ ছিল। এরমধ্যে একটি মৃতদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয় এবং ওই নমুনায় নিপাহ ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। তবে অন্য জীবিত সন্দেহাভাজন রোগীর রক্তে নিপাহ ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।
এতে বলা হয়, আইইডিসিআর বিভিন্ন সময়ে মৃত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি এবং তাদের স্বাস্থ্যের বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রেখেছে।
বিজ্ঞপ্তির বক্তব্য অনুযায়ী, সাধারণত বাদুর নিপাহ ভাইরাসের বাহক। এই প্রাণী খেজুরের কাঁচা রসপান করার মাধ্যমে সেখানে নিপাহ ভাইরাস ছড়ায়। এতে খেজুরের কাঁচা রস সংক্রমিত হয়ে যায়। এই কাঁচা রস কেউ পান করলে তিনি নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হন। এরপর এই ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে ছড়ায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই আউট ব্রেক ইনভেস্টিগেশনে প্রথম মৃত ব্যক্তির খেজুরের কাঁচা রসপান করার সুনির্দিষ্ট ইতিহাস না পাওয়া গেলেও অন্যান্য মৃত ব্যক্তি প্রথম মৃত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে আক্রান্ত হয়েছিল বলে আইইডিসিআর ধারণা করছে।
আইইডিসিআর-এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আইইডিসিআর সর্বসাধারণকে খেজুরের কাঁচারস পানে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মী ও পরিবারের সদস্যদেরও নিপাহ সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা যেমন মাস্ক ও গ্লাভস পরিধান করে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সেবাদানের পরামর্শ দিয়েছে।
এছাড়াও আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার পর হাত সাবান ও পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা ও এ রকম রোগের ক্ষেত্রে রোগীদের সম্পূর্ণ পৃথক স্থানে রাখা ও পৃথক স্থানে সেবা দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে।
/বাংলা ট্রিবিউন!
0 মন্তব্যসমূহ