গাজী গোফরানঃ
এই মুহূর্তে ঠিক পৃথিবীর কোন জায়গায় আছি জানিনা। তবে এতটুকু জানি আটলান্টিক ওশানে বসে ভাবছি তোমায়। সমুদ্রের মাপজোখে আমি অভ্যস্থ নই, ওটা নটিক্যাল ডিপার্টমেন্টের কাজ । জানতে ইচ্ছে করছেনা ঠিক কতো ডিগ্রী অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশ মেপে ভেসে যাচ্ছে এই জাহাজটি । আর এ সম্পর্কে আমার কোনো পড়াশোনাও নেই। আমার কার্যকলাপ সব কিছু হৃদয়হীন মেশিনের সাথে। ঠিক যেমনটা তোমাকে ভেবে কিছু হৃদয়হীন শব্দের অপচয়।
ডিউটি শেষ করে রুমে আসলাম মাত্র। হাতে মুখে তেল কালির দাগ, গা থেকে বিশ্রী গন্ধ বেরুচ্ছে। মনে হচ্ছে নিজেই নিজের গন্ধে বমি করে দেবো। গত দু'দিন অবশ্য বমি হয়েছে প্রচুর, আবহাওয়া খুব একটা ভালো ছিলো না। এই বিশাল দানবাকার জাহাজটি উল্টেপাল্টে নেচে নেচে এগুতে গিয়ে পেটের নাড়ীভুঁড়ি সব তালগোল পাকিয়ে বের হবার অবস্থা। কিন্তু তাই বলে আমার জীবন কিন্তু থেমে থাকেনি। ঠিক প্রতিদিনের মতো আট ঘন্টা ডিউটি, দেড় ঘন্টা ডাইনিং এ, পাঁচ ঘন্টা ঘুম ও বাকি সময়টা সমুদ্র ও আকাশের রঙ দেখে কাটছে ।
রুমে ঢুকে ল্যাপটপ অন করতে দেখি দুটো হাতের ছবি, একে অপরকে জড়িয়ে আছে। হাত দুটো চেনাচেনা লাগছে, কিন্তু বুঝতে পারছিনা ছবিটা কবে কখন কার হাত ধরে কে তুলেছিলো। আমি শেষবার যখন তোমার হাত ধরেছিলাম, তুমি সর্পচোখের বিষাদ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলেছিলে জানোয়ারের মতো ধরছো কেনো? নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে আছি, তালুতে দু ইঞ্চির চেয়ে একটু বেশি একটা দাগ পড়ে গেছে। লোহালক্কড় নিয়ে এতো টানাহেঁচড়া করলে দাগতো পড়বেই। এতে অবশ্য আমার খারাপ লাগছেনা। বরং কেনো জানি ভালো লাগছে৷ তুমিতো জানো পৃথিবীর সব সুন্দর জিনিসে দাগ থাকে। আর নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে কালিমাখা এই হাত পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর হাত, সবচেয়ে পবিত্র হাত। সবার এই হাত ধরে রাখার সামর্থ্য হয়না। হা হা, স্বার্থপরের মতো কথা বললাম কী?
এদিকে হয়েছে কী জানো, কিছুদিন আগে একটা মেয়ের সাথে কেমন করে যেনো প্রেম হয়ে গিয়েছিলো। দেশ ছাড়ার আগে একবার আমরা দেখা করেছিলাম। একসাথে সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম। যেই তুমি আমাকে সিনেমা দেখতে যেতে বললে আমি নাক ছিটকাতাম সেই আমি নিজ থেকে তাকে নিয়ে সিনেমা দেখতে গিয়েছি৷ ছবিটা ছিলো প্রেমময়। ছবিতে নায়ক কি নিদারুণ ভাবে প্রেম বিলিয়ে দিচ্ছে তার প্রেমিকাকে। সিনেমার এক পর্যায়ে আমিও হয়ে উঠলাম একজন সাহসী ও প্রেমিক। মেয়েটাকে সিনেমা থেকে বের করে চলে গেলাম নির্জন এক জায়গায়। আমরা পাশাপাশি বসলাম , আগে থেকে আনিয়ে রাখা কোমল পানীয়তে গলা ভিজিয়ে নিজেদের ঠোঁট ভেজালাম। মদ ভেজা ভালোবাসা দুজনে সেদিন সমুদ্র স্নানে গিয়েছিলাম।
দূরত্ব ক্রমশ কমে আসতে শুরু করলো। আমরা একে অপরের ভীতর ঢুকে যেতে শুরু করলাম চারপায়ে হেঁটে। তার গ্রীবাদেশে ঠোঁট রেখে অশ্লীল ও ইতর হয়ে উঠলাম ধীরে ধীরে। পৃথিবীর সকল উষ্ণতা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে সেই সময়ের কাছে। আদিমমত্ত কামনায় বিশ্ব শান্তির পতাকা উত্তোলনের মহড়া চলছে যেনো। বিউগল বেজে উঠলো, আমি মাইলফলক ছোঁবার আশায় নিজেকে আরো ক্ষিপ্ত করে তুললাম। দাঁতে আমি শান দিয়ে এসেছি। তাই নারীমাংশ হজম করতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি আমাকে। ঠিক সে সময় মেয়েটা আমার মাথায় হাত রাখলো। আমাকে বললো, ভালোবাসি ও ছেড়ে যেওনা - অশ্লীল দুটো শব্দ।
পরদিন আমরা দু'জন বাসায় ফিরে গেলাম যে যার মতো । আমাকে সমুদ্রে যেতে হবে বলে আমি আমার ব্যাগ গোছাতে ভাবলাম তাকে ছেড়ে যাচ্ছি কিন্তু তাকে বলা হয়নি তাকে ছেড়ে যেতে পারছিনা আজ অনেকগুলো বছর ধরে। শেষ দেখায় আমার হাত যখন তোমার হাত স্পর্শ করেছিলো সেদিন কি তোমার মনে ছিলো দুটো অশ্লীল শব্দ - "ভালোবাসি ও ছেড়ে যেওনা। "
সময় পেরিয়ে যাচ্ছে সময়ের বুকে পা রেখে কিন্তু পৃথিবীর অজানা গন্তব্যে থেকেও ছেলেটি ছেড়ে যেতে পারেনি মাথায় হাত রাখা তুচ্ছ দুটো অশ্লীল নোংরা শব্দ'কে.......
(ইহা একটি কাল্পনিক গল্প)
এই মুহূর্তে ঠিক পৃথিবীর কোন জায়গায় আছি জানিনা। তবে এতটুকু জানি আটলান্টিক ওশানে বসে ভাবছি তোমায়। সমুদ্রের মাপজোখে আমি অভ্যস্থ নই, ওটা নটিক্যাল ডিপার্টমেন্টের কাজ । জানতে ইচ্ছে করছেনা ঠিক কতো ডিগ্রী অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশ মেপে ভেসে যাচ্ছে এই জাহাজটি । আর এ সম্পর্কে আমার কোনো পড়াশোনাও নেই। আমার কার্যকলাপ সব কিছু হৃদয়হীন মেশিনের সাথে। ঠিক যেমনটা তোমাকে ভেবে কিছু হৃদয়হীন শব্দের অপচয়।
ডিউটি শেষ করে রুমে আসলাম মাত্র। হাতে মুখে তেল কালির দাগ, গা থেকে বিশ্রী গন্ধ বেরুচ্ছে। মনে হচ্ছে নিজেই নিজের গন্ধে বমি করে দেবো। গত দু'দিন অবশ্য বমি হয়েছে প্রচুর, আবহাওয়া খুব একটা ভালো ছিলো না। এই বিশাল দানবাকার জাহাজটি উল্টেপাল্টে নেচে নেচে এগুতে গিয়ে পেটের নাড়ীভুঁড়ি সব তালগোল পাকিয়ে বের হবার অবস্থা। কিন্তু তাই বলে আমার জীবন কিন্তু থেমে থাকেনি। ঠিক প্রতিদিনের মতো আট ঘন্টা ডিউটি, দেড় ঘন্টা ডাইনিং এ, পাঁচ ঘন্টা ঘুম ও বাকি সময়টা সমুদ্র ও আকাশের রঙ দেখে কাটছে ।
রুমে ঢুকে ল্যাপটপ অন করতে দেখি দুটো হাতের ছবি, একে অপরকে জড়িয়ে আছে। হাত দুটো চেনাচেনা লাগছে, কিন্তু বুঝতে পারছিনা ছবিটা কবে কখন কার হাত ধরে কে তুলেছিলো। আমি শেষবার যখন তোমার হাত ধরেছিলাম, তুমি সর্পচোখের বিষাদ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলেছিলে জানোয়ারের মতো ধরছো কেনো? নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে আছি, তালুতে দু ইঞ্চির চেয়ে একটু বেশি একটা দাগ পড়ে গেছে। লোহালক্কড় নিয়ে এতো টানাহেঁচড়া করলে দাগতো পড়বেই। এতে অবশ্য আমার খারাপ লাগছেনা। বরং কেনো জানি ভালো লাগছে৷ তুমিতো জানো পৃথিবীর সব সুন্দর জিনিসে দাগ থাকে। আর নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে কালিমাখা এই হাত পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর হাত, সবচেয়ে পবিত্র হাত। সবার এই হাত ধরে রাখার সামর্থ্য হয়না। হা হা, স্বার্থপরের মতো কথা বললাম কী?
এদিকে হয়েছে কী জানো, কিছুদিন আগে একটা মেয়ের সাথে কেমন করে যেনো প্রেম হয়ে গিয়েছিলো। দেশ ছাড়ার আগে একবার আমরা দেখা করেছিলাম। একসাথে সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম। যেই তুমি আমাকে সিনেমা দেখতে যেতে বললে আমি নাক ছিটকাতাম সেই আমি নিজ থেকে তাকে নিয়ে সিনেমা দেখতে গিয়েছি৷ ছবিটা ছিলো প্রেমময়। ছবিতে নায়ক কি নিদারুণ ভাবে প্রেম বিলিয়ে দিচ্ছে তার প্রেমিকাকে। সিনেমার এক পর্যায়ে আমিও হয়ে উঠলাম একজন সাহসী ও প্রেমিক। মেয়েটাকে সিনেমা থেকে বের করে চলে গেলাম নির্জন এক জায়গায়। আমরা পাশাপাশি বসলাম , আগে থেকে আনিয়ে রাখা কোমল পানীয়তে গলা ভিজিয়ে নিজেদের ঠোঁট ভেজালাম। মদ ভেজা ভালোবাসা দুজনে সেদিন সমুদ্র স্নানে গিয়েছিলাম।
দূরত্ব ক্রমশ কমে আসতে শুরু করলো। আমরা একে অপরের ভীতর ঢুকে যেতে শুরু করলাম চারপায়ে হেঁটে। তার গ্রীবাদেশে ঠোঁট রেখে অশ্লীল ও ইতর হয়ে উঠলাম ধীরে ধীরে। পৃথিবীর সকল উষ্ণতা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে সেই সময়ের কাছে। আদিমমত্ত কামনায় বিশ্ব শান্তির পতাকা উত্তোলনের মহড়া চলছে যেনো। বিউগল বেজে উঠলো, আমি মাইলফলক ছোঁবার আশায় নিজেকে আরো ক্ষিপ্ত করে তুললাম। দাঁতে আমি শান দিয়ে এসেছি। তাই নারীমাংশ হজম করতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি আমাকে। ঠিক সে সময় মেয়েটা আমার মাথায় হাত রাখলো। আমাকে বললো, ভালোবাসি ও ছেড়ে যেওনা - অশ্লীল দুটো শব্দ।
পরদিন আমরা দু'জন বাসায় ফিরে গেলাম যে যার মতো । আমাকে সমুদ্রে যেতে হবে বলে আমি আমার ব্যাগ গোছাতে ভাবলাম তাকে ছেড়ে যাচ্ছি কিন্তু তাকে বলা হয়নি তাকে ছেড়ে যেতে পারছিনা আজ অনেকগুলো বছর ধরে। শেষ দেখায় আমার হাত যখন তোমার হাত স্পর্শ করেছিলো সেদিন কি তোমার মনে ছিলো দুটো অশ্লীল শব্দ - "ভালোবাসি ও ছেড়ে যেওনা। "
সময় পেরিয়ে যাচ্ছে সময়ের বুকে পা রেখে কিন্তু পৃথিবীর অজানা গন্তব্যে থেকেও ছেলেটি ছেড়ে যেতে পারেনি মাথায় হাত রাখা তুচ্ছ দুটো অশ্লীল নোংরা শব্দ'কে.......
(ইহা একটি কাল্পনিক গল্প)
0 মন্তব্যসমূহ