আজ উড়েছিল মানচিত্র খচিত বাংলাদেশের প্রথম পতাকা

বি,এন ডেস্কঃ
আজ ২ মার্চ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক ছাত্রসমাবেশে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা প্রথম উত্তোলন করা হয়। সবুজ, লাল, সোনালি এই তিন রঙের পতাকাটি সেই যে বাংলার আকাশে উড়েছিল, তা আর নামাতে পারেনি পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও সরকার।


‘জয় বাংলা’, ‘পিন্ডি না ঢাকা? ঢাকা ঢাকা’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর বাংলাদেশ স্বাধীন কর’— মার্চে বাংলার আকাশ-বাতাস শ্লোগানে শ্লোগানে মুখর হয়ে উঠেছিল। দিকে দিকে শুরু হয় পাকিস্তানের পতাকা পোড়ানো। আর এই সময়টাকেই ছাত্রনেতারা বেছে নিলেন বাংলার স্বাধিকার আন্দোলনকে স্বাধীনতা সংগ্রামে পরিপূর্ণভাবে রূপান্তর করার মোক্ষম মুহূর্ত হিসেবে। এই দিনটিই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের পর পতাকা উত্তোলন দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

কোনো রকম প্রস্তুতি ছিল না। কে পাশে এসে দাঁড়াবে, কে দেবে সহযোগিতা— কিছুই জানতো না বাংলার খেটে খাওয়া সাধারণ জনগণ। পাকিস্তানের সুশিক্ষিত সামরিক বাহিনীর সঙ্গে লড়তে হলে যে প্রস্তুতি প্রয়োজন, ছিল না তার কিছুই। তারপরও অপমান, বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়তে সমস্ত কিছুকে তুচ্ছ জ্ঞান করে কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, চাকরিজীবী সবাই যুদ্ধে নামতে প্রস্তুত হচ্ছিল। কারণ ২৩ বছর ধরে পাকিস্তানিদের অন্যায় নিষ্পেশন থেকে মুক্ত হতে জনযুদ্ধের যেকোনো বিকল্প নেই, সেটা উপলব্ধি করেছিল এই ভূখণ্ডের বাসিন্দারা।

আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে গোপনে একটি স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ গঠন করেছিলেন এই ছাত্র সংগঠনের মূল নেতারা। এই কাজটি তারা করেছিলেন ১৯৬৯ সালে, ১১ দফা আন্দোলন চলার সময়। এই বিপ্লবী পরিষদের সদস্যদের ভাবনায় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার নকশা ছিল। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ পাকিস্তানিদের বিশ্বাসঘাতক চেহারা আবারও উন্মোচিত হয় বাংলার মানুষের সামনে। এর প্রতিবাদে ছাত্রনেতারাও তার জবাব দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক জনসভা আহ্বান করা হয় ২ মার্চ। সেই বিশাল সভায় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি আ স ম আব্দুর রব, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস মাখন, ছাত্রলীগ সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।

সেই পতাকা উত্তোলনের মুহূর্তেই ছাত্ররা বুঝে নিয়েছিল ‘যুদ্ধ অনিবার্য’। সেদিন সচিবালয়েও পাকিস্তানি পতাকা নমিয়ে বাংলাদেশের মানচিত্র আঁকা পতাকা উড়ানো হয়। সেদিন রাতে হঠাত্ করে বেতার মারফত ঢাকা শহরে কারফিউ জারি করা হয়। কারফিউ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ছাত্রাবাস ও শ্রমিক এলাকা থেকে ছাত্র-জনতা ও শ্রমিকেরা কারফিউ’র বিরুদ্ধে প্রবল স্লোগান তুলে কারফিউ ভেঙে মিছিল বের করে। স্লোগান ছিল : ‘সান্ধ্য আইন মানি না’, ‘জয় বাংলা’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’। সমস্ত শহরে কারফিউ ভঙ্গ করে ব্যারিকেড তৈরি করা হয়। ডিআইটি এভিনিউয়ের মোড়, মর্নিং-নিউজ পত্রিকা অফিসের সামনে রাত সাড়ে ৯টায় সামরিক বাহিনী জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করে। মানুষের বিশাল মিছিল কারফিউ ভঙ্গ করে গভর্নর হাউজের দিকে এগিয়ে গেলে সেখানেও গুলি চালানো হয়। এ ছাড়াও শহরের বিভিন্ন এলাকায় কারফিউ ভঙ্গকারীদের ওপর বেপরোয়া গুলি চলে।

ইত্তেফাক/আরকেজি

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ