পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। দেশের ১১৭টি উপজেলায় রবিবার (২৪ মার্চ) সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এ ভোটগ্রহণ চলবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে কমিশনের পক্ষ থেকে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনি সামগ্রী নিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সদস্যদের নিয়ে প্রিজাইডিং অফিসাররা শনিবার (২৩ মার্চ) রাত থেকেই নিজ নিজ নির্বাচনি কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলোতে ভোটের দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনি উপজেলাগুলোতে চলাচলে আরোপ হয়েছে বিধি-নিষেধ।
তৃতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে ইসি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন উপজেলা ও থানা থেকে তিনজন নির্বাহী কর্মকর্তা ও চারজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া ২৪টি উপজেলায় অতিরিক্ত বিজিবি ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।
তৃতীয় ধাপে ১২৭টি উপজেলায় নির্বাচনের লক্ষ্যে তফসিল ঘোষণা করা হয়। তবে মামলাজনিত কারণে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া ও চট্টগ্রামের লোহাগড়ার নির্বাচন স্থগিত; নরসিংদী ও কক্সবাজার সদর উপজেলার ভোট চতুর্থ ধাপে স্থানান্তর এবং বরিশালের গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, মাদারীপুরের শিবচর, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ, নরসিংদীর পলাশ এবং চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার সব কয়টি পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় সেগুলোতে ভোটগ্রহণ হচ্ছে না। ফলে ১১৭টি উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে।
এবারের নির্বাচনে ২৫ জেলার ১১৭ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩৪০ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫৮৪ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩৯৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই ধাপের নির্বাচনে ৯ হাজার ২৯৮টি ভোটকেন্দ্রে ১ কোটি ১৮ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫১ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।
বিনাভোটে ৫৫ জন নির্বাচিত
প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের ধারাবাহিকতায় এ ধাপেও বেশ কয়েকজন চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ ধাপে মোট ৫৫ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৩৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৯ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৩ জন।
চার উপজেলায় ইভিএমে ভোট
উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে দেশের সবগুলো সদর উপজেলাতে ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ব্যবহারের ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত সীমিত পরিসরে এটি ব্যবহার হচ্ছে। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে কোনও উপজেলাতেই ইভিএম ব্যবহার করেনি কমিশন। তৃতীয় ধাপে এসে তারা প্রথমবারের মতো ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ধাপে চারটি সদর উপজেলায় ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে। উপজেলাগুলো হলো মানিকগঞ্জ সদর, মেহেরপুর সদর, গোপালগঞ্জ সদর ও রংপুর সদর। আগামী ধাপে আরও ৬টি উপজেলায় ইভিএমে ভোট হবে বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, সবগুলো সদর উপজেলাতে আমরা ইভিএম ব্যবহারের জন্য প্রথমে সিদ্ধান্ত নিয়েও সবদিক বিবেচনা করে ১০টি উপজেলা সদরে ইভিএম ব্যবহার করছি। তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে ৪টি জেলার সদর উপজেলায় ইভিএম ব্যবহার হচ্ছে। পরের ধাপে আরও ৬টিতে ইভিএম ব্যবহার হবে।
নির্বাচনের বিষয়ে কমিশন খুবই কঠোর অবস্থানে রয়েছে দাবি করে হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘যেখানেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাচ্ছি ওইসব উপজেলা থেকে আমরা তাদের তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কোনও অভিযোগ প্রাথমিক তদন্তে সত্য প্রমাণিত হলে আমরা তাদের প্রত্যাহার করছি। ইতোমধ্যে আমরা তিনজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করেছি। বেশ কিছু ওসি ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তাকেও দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছি।’
এই ধাপে মাদারীপুরের রাজৈর, চট্টগ্রামের লোহাগড়া এবং চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ ও কচুয়ার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ইসি সচিব বলেন, ‘আমরা তৃতীয় ধাপের ২৪টি উপজেলায় অতিরিক্ত বিজিবি নিয়োগ করেছি। যেখানে প্রয়োজন, আমাদের কাছে বার্তা এলেই বিজিবির সঙ্গে কথা বলে ওইসব উপজেলাতে অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য নিয়োগ করে দিচ্ছি। রংপুরের মিঠাপুকুরে আমরা ৫ প্লাটুন বিজিবি এবং ৭ প্লাটুন র্যাব ও ১৭ জন ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করেছি। আমরা যেসব উপজেলাতে ন্যূনতম অনিয়ম বা বিশৃঙ্খলার সম্ভাবনা আছে ওইসব এলাকায় অতিরিক্ত নজর দিচ্ছি।’
ইসি সচিব বলেন, ‘যেসব উপজেলায় আমাদের সংসদ সদস্যরা প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছেন, তাদেরও আমরা সতর্কবার্তা হিসেবে এলাকা ত্যাগ করার নোটিশ দিয়েছি। এ ধরনের কয়েকটি উপজেলায় সংসদ সদস্যদের নোটিশ দিয়েছি। সুতরাং যেকোনও ধরনের ভয়-ভীতি, প্রভাব বা চাপের ঊর্ধ্বে থেকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য কমিশন দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছে। আমরা চাইবো প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের মতো তৃতীয় ধাপেও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ লক্ষ্যে আমরা যাবতীয় আয়োজন সম্পন্ন করেছি।’
যে ১১৭ উপজেলায় ভোট
তৃতীয় ধাপে যেসব উপজেলায় ভোট হবে সেগুলো হলো— চাপাইনাবাগঞ্জের ভোলাহাট, গোমস্তাপুর, নাচোল ও শিবগঞ্জ; রংপুরের সদর ও মিঠাপুকুর; চুয়াডাঙ্গার সদর, আলমডাঙ্গা, দামুড়হুদা ও জীবননগর; মাগুরার সদর, শ্রীপুর, শালিখা ও মোহাম্মদপুর; নড়াইলের সদর, কালিয়া ও লোহাগড়া; সাতক্ষীরার সদর, আশাশুনি, শ্যামনগর, কালীগঞ্জ, কলারোয়া, তালা ও দেবহাটা; কুষ্টিয়ার সদর, ভেড়ামারা, কুমারখালী, মিরপুর, খোকসা ও দৌলতপুর; মেহেরপুরের সদর, মুজিবনগর ও গাংনী; ঝিনাইদহের সদর, শৈলকুপা, হরিণাকুন্ডু ও কালীগঞ্জ; বরিশালের সদর, বাকেরগঞ্জ, বাবুগঞ্জ, বানারীপাড়া, উজিরপুর, মুলাদী ও হিজলা; ঝালকাঠির সদর, নলছিটি, রাজাপুর ও কাঠালিয়া; ভোলার বোরহানউদ্দিন; শেরপুরের নালিতাবাড়ী, শ্রীবর্দী ও ঝিনাইগাতি; মাদারীপুরের কালকিনি ও রাজৈর; শরিয়তপুরের সদর, জাজিরা, নড়িয়া, ডামুড্যা ও গোসাইরহাট; গোপালগঞ্জের সদর, কোটালিপাড়া, টুঙ্গীপাড়া, কাশিয়ানি ও মকসুদপুর; রাজবাড়ীর সদর, গোয়ালন্দ, পাংশা ও বালিয়াকান্দি; মানিকগঞ্জের সদর, দৌলতপুর, ঘিওর, শিবালয়, সিংগাইর, হরিরামপুর ও সাটুরিয়া; গাজীপুরের কাপাসিয়া, কালিয়াকৈর, শ্রীপুর ও কালিগঞ্জ; নরসিংদীর শিবপুর, মনোহরদী, বেলাব ও রায়পুরা; কিশোরগঞ্জের সদর, হোসেনপুর, কটিয়াদী, পাকুন্দিয়া, তাড়াইল, করিমগঞ্জ, ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম, নিকলী, বাজিতপুর, কুলিয়ারচর ও ভৈরব; চাঁদপুরের সদর, কচুয়া, মতলব উত্তর, মতলব দক্ষিণ, ফরিদগঞ্জ, হাজিগঞ্জ ও শাহরাস্তি; লক্ষ্মীপুরের সদর, রামগঞ্জ, রায়পুর, কমলনগর ও রামগতি; চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, পটিয়া, চন্দনাইশ ও বাঁশখালী; কক্সবাজারের পেকুয়া, মহেশখালী, রামু, উখিয়া ও টেকনাফ।
চৌহদ্দির বাইরে যাবে না রোহিঙ্গারা
এদিকে ভোটের নিরাপত্তায় কক্সবাজারের রোহিঙ্গাদের ২৩ থেকে ২৫ মার্চ ক্যাম্পের চৌহদ্দির বাইরে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
/বাংলা ট্রিবিউন!
0 মন্তব্যসমূহ