সাতকানিয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হত্যা মামলায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানসহ চারজনকে সরাসরি অভিযোগপত্রভুক্তের আদেশ দিতে ৪৪ জনের জবানবন্দি পর্যালোচনা করা হয়। তাদের মধ্যে ২৪ জনের জবানবন্দিতে আসামি আবদুল মোনাফ ও ওসমান গণির নাম এসেছে। এ ২৪ জনের মধ্যে ৫ আসামি বিচারকের সামনে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলার বাদী জবানবন্দি দিয়েছেন ১৮ জন পুলিশ ও বিচারকের সামনে। চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক জয়ন্তী রাণী রায় সাতকানিয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মোনাফসহ চারজনকে অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত করে পুরো অভিযোগপত্র আমলে নেয়ার আদেশ দেন গত ১১ ফেব্রুয়ারি। চাঞ্চল্যকর এ মামলার ধার্য তারিখ আজ মঙ্গলবার। এদিকে এ সংক্রান্তে বিচারকের ১০ পৃষ্ঠার আদেশে ৪৪ জনের জবানবন্দি পর্যালোচনা করার কথা বলা হয়েছে। আদেশে তদন্তকারী কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান মোল্লা আসামি আবদুল মোনাফ ও ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী (তৎকালীন) ওসমান গণিকে অভিযোগপত্রে ‘নট সেন্ট আপ’ দেখাতে গিয়ে আদালত ও প্রসিকিউটরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। এ কারণে তাকে সশরীরে আদালতে হাজির হতে বলা হয়। ১০ পৃষ্ঠার আদেশে বলা হয়েছে, নলুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আ. লীগ নেতা নুরুল আবছার হত্যা মামলায় বিচারিক আদালত সত্তরোর্ধ্ব বাদী আহমদ হোসেনের ২০০ ধারার জবানবন্দি গ্রহণ করেন। তিনি আবারো তার পুত্র হত্যায় মোনাফ চেয়ারম্যানসহ অন্যদের হাত রয়েছে বলে আদালতকে জানান।
এরপর মামলার আসামি মাহমুদুল হক প্রকাশ কালা মাদু, শাহ আলম, ইলিয়াছ, জসিম উদ্দিন ও তৌহিদুল ইসলামের আদালতিক জবানবন্দি পর্যালোচনা করেন আদালত। ৫ আসামির জবানবন্দিতে নুরুল আবছার হত্যাকাণ্ডে আসামি আবদুল মোনাফ ও ওসমান গনি চৌধুরীর জড়িত থাকার কথা উঠে আসে। এর মধ্যে আসামি জসিমের স্বীকারোক্তি আদেশে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। স্বীকারোক্তিতে জসিম আসামি ওসমান গণিকে মামু ও আবদুল মোনাফকে চেয়ারম্যান বলে উল্লেখ করেছিলেন।
১৮ সাক্ষীর মধ্যে আরিফ, মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন, মোহাম্মদ সেলিম, আহমদ হোসেন, মোহাম্মদ হাশেম, নুর হোসেন, মোশারফ হোসেন বাবু, মোহাম্মদ মাসুদ, মাস্টার দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ তাদের ১৬১ ধারার জবানবন্দিতে আসামি মোনাফ, ওসমান গণি, আবু তাহের ও সরোয়ার সালামকে এ ঘটনায় জড়িত বলে উল্লেখ করেন।
আসামি মোনাফসহ চারজনকে অন্তর্ভূক্ত করার যুগান্তকারী আদেশে আদালত বলেন, চার আসামির বিরুদ্ধে ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তি ১৬১ ধারায় সাক্ষীদের জবানবন্দিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকার পরও তদন্তকারী কর্মকর্তা কোন আইন বলে এবং কিভাবে অভিযোগপত্রে ‘নট সেন্ট আপ’ করেছেন তা আদালতের কাছে বোধগম্য ও গ্রহণযোগ্য নয়। বরং ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের পরিবর্তে তদন্ত কর্মকর্তা আদালত ও প্রসিকিউটরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন, যা কোনভাবেই আইন সমর্থিত নয়।
আদেশে আরো বলা হয়েছে, সার্বিক পর্যবেক্ষণে অভিযোগপত্রে বাদ দেয়ার সুপারিশকৃত আসামি আবদুল মোনাফ, ওসমান গনি, আবু তাহের ও সরোয়ার সালামের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪/১০৯ ধারার অপরাধ আমলে নেয়ার মতো পর্যাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণ বিদ্যমান। এ কারণে তাদেরকে সরাসরি অভিযোগপত্রভূক্ত করার আদেশ দেন আদালতের বিচারক।
আদেশে তদন্ত কর্মকর্তার বিষয়ে বলা হয়েছে, তদন্ত কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান মোল্লা তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে অবহেলার পরিচয় দিয়েছেন বলে আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা জানাতে স্বশরীরে আদালতে উপস্থিত হওয়ার জন্য তাকে আদেশও দেয়া হয়েছে। সেই আদেশের পরিপ্র্রেক্ষিতে তিনি ইতোমধ্যে আদালতে জবাব দাখিল করেছেন বলে জানা গেছে। আজ মঙ্গলবার আলোচিত এ মামলার ধার্য তারিখ নির্ধারিত রয়েছে।
আদালত থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, দীর্ঘ সাত বছর আগে নিজ বাড়িতেই খুন হয়েছিলেন জনপ্রিয় চেয়ারম্যান নুরুল আবছার। বিচারকের আদেশে অপরাধ আমলে নেয়া থেকে বাদ গেছেন শওকত আলী ও এনামুল হক এনাম। ১১ ফেব্রুয়ারি অভিযোগপত্র আমলে নেয়ার দিন আ. লীগ নেতা মোনাফসহ ৭ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি হয়েছিল।
এর আগে সিআইডি ও সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের দেয়া একই ধরনের তদন্ত প্রতিবেদনে আ. লীগ নেতা আবদুল মোনাফসহ ছয় আসামিকে অব্যাহতির সুপারিশ করায় অধিকতর তদন্ত চেয়ে আদালতের কাছে নারাজি আবেদন করেছিলেন বাদী। সেই নারাজি আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর রিভিশন আবেদন করেছিলেন। রিভিশন আবেদনের শুনানি শেষে গত বছরের ৩ মে চট্টগ্রামের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক রিভিশন মঞ্জুর করেন। নিয়ম অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটির নিয়মিত কার্যক্রম চলে আসছে।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ২৫ ডিসেম্বর দিনগত রাত দেড়টার দিকে নলুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আবছারকে গুলি করে হত্যার পর ২৭ ডিসেম্বর নুরুল আবছারের বাবা আহমদ হোসেন বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। শুরুতে এসআই মহিউদ্দিন ও পরে সহকারী পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম মামলাটির তদন্ত করেন।
পরে সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হ্লা চিং প্রু তদন্তের দায়িত্ব পান। তিনি ২০১৩ সালের ১০ জুলাই এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে। আদালতে দেওয়া অভিযোগপত্রে ছয় আসামিকে অব্যাহতির সুপারিশ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। ওই ছয়জন হলেন- সাতকানিয়া উপজেলার তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুল মোনাফ, ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী ওসমান গণি চৌধুরী, আবু তাহের, শওকত আলী, এনামুল হক এনাম ও সরওয়ার সালাম।
এদিকে নুরুল আবছার হত্যার পর ২০১২ সালের ১৯ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে হত্যাকাণ্ডে আবদুল মোনাফ চেয়ারম্যান জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন বাদী আহমদ হোসেন। ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি এবং স্থানীয় জাফর আহম্মেদ কলেজের শিক্ষক নুরুল আবছার খুনের পর পুলিশ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল। তাদের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদনে অব্যাহতির সুপারিশ করা ওসমান গণি চৌধুরী, আবু তাহের, শওকত আলী, এনামুল হক এনামও ছিলেন।
সিআইডির দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে আপত্তি জানিয়ে বাদী নারাজি আবেদন করলে ২০১৪ সালের ২৭ জানুয়ারি তা খারিজ করে দেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জাহান নাসরিন। নারাজি নামঞ্জুর হওয়ার পর অধিকতর তদন্ত চেয়ে রিভিশন আবেদন করেছিলেন মামলার বাদী আহমদ হোসেন। অভিযোগপত্রভূক্ত আসামিরা হলেন- শাহ আলম, মাহমুদুল হক ওরফে কালা মাদু, দিল মোহাম্মদ, মোহাম্মদ ইলিয়াছ, মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, আবদুল জলিল, জাগির ওরফে জাকির হোসেন, লেদু ওরফে জয়নাল আবেদিন, নেজাম উদ্দিন এবং লতিফসহ ১৩ জন।
মামলার বাদীপক্ষ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঘটনার পর থানা পুলিশ ও সিআইডির তদন্ত শেষে সিআইডির হাতঘুরে ১৩ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে প্রথম অভিযোগপত্র আসে। এতে উপজেলা চেয়ারম্যান (সাবেক) মোনাফসহ উল্লেখিত ৬ জনকে বাদ দেয়ার সুপারিশ করা হয়। এ অভিযোগপত্রের উপর নারাজি আবেদন দাখিল করেন মামলার বাদী। শুনানি শেষে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নারাজি খারিজ করে দেন। এরপর বাদীপক্ষ উচ্চতর আদালতে এ আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন দায়ের করেন। এতে মামলাটি আবারো তদন্তের আদেশ হয় আদালতের তরফে। মামলাটি তদন্ত করে সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদনের মতোই অধিদতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন আদালতে।
এ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আবারো নারাজি আবেদন জমা দেন মামলার বাদী। এ নারাজি আবেদনের উপর শুনানি শেষে সিনিয়র বিচারিক হাকিম মোনাফ চেয়ারম্যানসহ (সাবেক) ৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়ার আদেশ দেন। এ অবস্থায় নুরুল আবছার হত্যা মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম দেরিতে হলেও গতি এসেছে বলে জানিয়ে বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট শুভাশীষ শর্মা বলেন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোনাফসহ ৪ আসামির বিরুদ্ধে অপরাধ সরাসরি আমলে নেয়ার আদেশ দানের মাধ্যমে এ মামলার বিচারিক কার্যক্রমে গতি এসেছে।
/আজাদী!
এরপর মামলার আসামি মাহমুদুল হক প্রকাশ কালা মাদু, শাহ আলম, ইলিয়াছ, জসিম উদ্দিন ও তৌহিদুল ইসলামের আদালতিক জবানবন্দি পর্যালোচনা করেন আদালত। ৫ আসামির জবানবন্দিতে নুরুল আবছার হত্যাকাণ্ডে আসামি আবদুল মোনাফ ও ওসমান গনি চৌধুরীর জড়িত থাকার কথা উঠে আসে। এর মধ্যে আসামি জসিমের স্বীকারোক্তি আদেশে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। স্বীকারোক্তিতে জসিম আসামি ওসমান গণিকে মামু ও আবদুল মোনাফকে চেয়ারম্যান বলে উল্লেখ করেছিলেন।
১৮ সাক্ষীর মধ্যে আরিফ, মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন, মোহাম্মদ সেলিম, আহমদ হোসেন, মোহাম্মদ হাশেম, নুর হোসেন, মোশারফ হোসেন বাবু, মোহাম্মদ মাসুদ, মাস্টার দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ তাদের ১৬১ ধারার জবানবন্দিতে আসামি মোনাফ, ওসমান গণি, আবু তাহের ও সরোয়ার সালামকে এ ঘটনায় জড়িত বলে উল্লেখ করেন।
আসামি মোনাফসহ চারজনকে অন্তর্ভূক্ত করার যুগান্তকারী আদেশে আদালত বলেন, চার আসামির বিরুদ্ধে ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তি ১৬১ ধারায় সাক্ষীদের জবানবন্দিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকার পরও তদন্তকারী কর্মকর্তা কোন আইন বলে এবং কিভাবে অভিযোগপত্রে ‘নট সেন্ট আপ’ করেছেন তা আদালতের কাছে বোধগম্য ও গ্রহণযোগ্য নয়। বরং ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের পরিবর্তে তদন্ত কর্মকর্তা আদালত ও প্রসিকিউটরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন, যা কোনভাবেই আইন সমর্থিত নয়।
আদেশে আরো বলা হয়েছে, সার্বিক পর্যবেক্ষণে অভিযোগপত্রে বাদ দেয়ার সুপারিশকৃত আসামি আবদুল মোনাফ, ওসমান গনি, আবু তাহের ও সরোয়ার সালামের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪/১০৯ ধারার অপরাধ আমলে নেয়ার মতো পর্যাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণ বিদ্যমান। এ কারণে তাদেরকে সরাসরি অভিযোগপত্রভূক্ত করার আদেশ দেন আদালতের বিচারক।
আদেশে তদন্ত কর্মকর্তার বিষয়ে বলা হয়েছে, তদন্ত কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান মোল্লা তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে অবহেলার পরিচয় দিয়েছেন বলে আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা জানাতে স্বশরীরে আদালতে উপস্থিত হওয়ার জন্য তাকে আদেশও দেয়া হয়েছে। সেই আদেশের পরিপ্র্রেক্ষিতে তিনি ইতোমধ্যে আদালতে জবাব দাখিল করেছেন বলে জানা গেছে। আজ মঙ্গলবার আলোচিত এ মামলার ধার্য তারিখ নির্ধারিত রয়েছে।
আদালত থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, দীর্ঘ সাত বছর আগে নিজ বাড়িতেই খুন হয়েছিলেন জনপ্রিয় চেয়ারম্যান নুরুল আবছার। বিচারকের আদেশে অপরাধ আমলে নেয়া থেকে বাদ গেছেন শওকত আলী ও এনামুল হক এনাম। ১১ ফেব্রুয়ারি অভিযোগপত্র আমলে নেয়ার দিন আ. লীগ নেতা মোনাফসহ ৭ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি হয়েছিল।
এর আগে সিআইডি ও সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের দেয়া একই ধরনের তদন্ত প্রতিবেদনে আ. লীগ নেতা আবদুল মোনাফসহ ছয় আসামিকে অব্যাহতির সুপারিশ করায় অধিকতর তদন্ত চেয়ে আদালতের কাছে নারাজি আবেদন করেছিলেন বাদী। সেই নারাজি আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর রিভিশন আবেদন করেছিলেন। রিভিশন আবেদনের শুনানি শেষে গত বছরের ৩ মে চট্টগ্রামের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক রিভিশন মঞ্জুর করেন। নিয়ম অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটির নিয়মিত কার্যক্রম চলে আসছে।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ২৫ ডিসেম্বর দিনগত রাত দেড়টার দিকে নলুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আবছারকে গুলি করে হত্যার পর ২৭ ডিসেম্বর নুরুল আবছারের বাবা আহমদ হোসেন বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। শুরুতে এসআই মহিউদ্দিন ও পরে সহকারী পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম মামলাটির তদন্ত করেন।
পরে সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হ্লা চিং প্রু তদন্তের দায়িত্ব পান। তিনি ২০১৩ সালের ১০ জুলাই এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে। আদালতে দেওয়া অভিযোগপত্রে ছয় আসামিকে অব্যাহতির সুপারিশ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। ওই ছয়জন হলেন- সাতকানিয়া উপজেলার তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুল মোনাফ, ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী ওসমান গণি চৌধুরী, আবু তাহের, শওকত আলী, এনামুল হক এনাম ও সরওয়ার সালাম।
এদিকে নুরুল আবছার হত্যার পর ২০১২ সালের ১৯ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে হত্যাকাণ্ডে আবদুল মোনাফ চেয়ারম্যান জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন বাদী আহমদ হোসেন। ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি এবং স্থানীয় জাফর আহম্মেদ কলেজের শিক্ষক নুরুল আবছার খুনের পর পুলিশ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল। তাদের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদনে অব্যাহতির সুপারিশ করা ওসমান গণি চৌধুরী, আবু তাহের, শওকত আলী, এনামুল হক এনামও ছিলেন।
সিআইডির দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে আপত্তি জানিয়ে বাদী নারাজি আবেদন করলে ২০১৪ সালের ২৭ জানুয়ারি তা খারিজ করে দেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জাহান নাসরিন। নারাজি নামঞ্জুর হওয়ার পর অধিকতর তদন্ত চেয়ে রিভিশন আবেদন করেছিলেন মামলার বাদী আহমদ হোসেন। অভিযোগপত্রভূক্ত আসামিরা হলেন- শাহ আলম, মাহমুদুল হক ওরফে কালা মাদু, দিল মোহাম্মদ, মোহাম্মদ ইলিয়াছ, মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, আবদুল জলিল, জাগির ওরফে জাকির হোসেন, লেদু ওরফে জয়নাল আবেদিন, নেজাম উদ্দিন এবং লতিফসহ ১৩ জন।
মামলার বাদীপক্ষ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঘটনার পর থানা পুলিশ ও সিআইডির তদন্ত শেষে সিআইডির হাতঘুরে ১৩ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে প্রথম অভিযোগপত্র আসে। এতে উপজেলা চেয়ারম্যান (সাবেক) মোনাফসহ উল্লেখিত ৬ জনকে বাদ দেয়ার সুপারিশ করা হয়। এ অভিযোগপত্রের উপর নারাজি আবেদন দাখিল করেন মামলার বাদী। শুনানি শেষে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নারাজি খারিজ করে দেন। এরপর বাদীপক্ষ উচ্চতর আদালতে এ আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন দায়ের করেন। এতে মামলাটি আবারো তদন্তের আদেশ হয় আদালতের তরফে। মামলাটি তদন্ত করে সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদনের মতোই অধিদতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন আদালতে।
এ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আবারো নারাজি আবেদন জমা দেন মামলার বাদী। এ নারাজি আবেদনের উপর শুনানি শেষে সিনিয়র বিচারিক হাকিম মোনাফ চেয়ারম্যানসহ (সাবেক) ৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়ার আদেশ দেন। এ অবস্থায় নুরুল আবছার হত্যা মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম দেরিতে হলেও গতি এসেছে বলে জানিয়ে বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট শুভাশীষ শর্মা বলেন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোনাফসহ ৪ আসামির বিরুদ্ধে অপরাধ সরাসরি আমলে নেয়ার আদেশ দানের মাধ্যমে এ মামলার বিচারিক কার্যক্রমে গতি এসেছে।
/আজাদী!
0 মন্তব্যসমূহ