মোঃ বেলাল উদ্দিনঃ
বাঁশখালীর সর্ব দক্ষিণ-পশ্চিমের ইউনিয়ন ছনুয়া। বঙ্গোপসাগরের তীর বেষ্টিত অবহেলিত জনপদ। এই জনপদের মানুষের প্রদান পেশা লবণ চাষ ও মাছ ধরা। লবণ চাষ ও সাগরে মাছ ধরে কোনো রকম জীবিকা নির্বাহ করে। বর্তমানে লবণের দাম কম। তাছাড়া সাগরে মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় বর্তমানে ওই এলাকার হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর ‘নুন আনতে পানতা ফুরোয়’ অবস্থা। সম্প্রতি ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জন্ম নিবন্ধন ও মৃত্যু নিবন্ধন এবং ওয়ারিশ সনদের জন্য ওই এলাকার বাসিন্দারা ছুটছে ইউপি কার্য্যালয়ে। ছনুয়ায় জন্মনিবন্ধন সনদ ও মৃত্যুনিবন্ধন সনদ ইস্যু করতে অতিরিক্ত ‘ফি’ আদায় করার অভিযোগ উঠেছে।
অর্থনীতির চাকা সচল না থাকায় ছনুয়ার জনসাধারণ অতিরিক্ত ‘ফি’ দিয়ে সরকারি সেবা গ্রহণে হিমশিম খাচ্ছেন। ইউনিয়ন পরিষদে অতিরিক্ত ‘ফি’ অনাদায়ে বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এমনটি অভিযোগ সেবা গ্রহণকারীদের। সরকার
জন্মনিবন্ধন ‘ফি’ ৫০ টাকা নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করলেও; সরকারি নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অতিরিক্ত ‘ফি’ আদায় করছে ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের হর্তকর্তারা। সরকারি নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে মিনন আক্তার নামের এক মহিলা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিনন আক্তার ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্রের মহিলা উদ্যোক্তা। অপরদিকে তাকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ে সহযোগীতা করেন ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আনসার উল্লাহ্।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অতিরিক্ত অর্থের কিছু অংশ মিনন আক্তার ও আনসার উল্লাহ্ ভাগ ভাটোয়ারা করে নিলেও বাকি অংশ চলে যায় ইউনিয়ন পরিষদের অন্যান্য হর্তাকর্তাদের। যদিওবা সরকার জন্মনিবন্ধন ‘ফি’ ৫০ টাকা করে নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে গেজেট প্রকাশ করছে। কিন্তু সরকারি নির্দেশনা মানছেনা ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সংশ্লিষ্টরা। এমতাবস্থায় স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে মনে করেন সচেতন মহল।
সচেতন মহলের ভাষ্যমতে, সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য মিনন আক্তার ও আনসার উল্লাহ-ই যথেষ্ট। আনসার উল্লাহর বাড়ি বাঁশখালীর নাপোড়া হলেও;তিনি বর্তমানে বাঁশখালী পৌরসভায় বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন। একজন ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের বহুতল ভবন নির্মাণের অর্থের উৎস কি? এমন প্রশ্ন জনমনে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদে জাতীয়তা সনদ ২০ টাকা, জন্ম সনদ ৩০০ টাকা ও মৃত্যুনিবন্ধন সনদ ২০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে।
একজন ভুক্তভোগী হলেন ছনুয়া খুদুকখালী গ্রামের এম. এ হোছাইন। তিনি এ প্রতিবেদককে অভিযোগ করে বলেন,”আমি একটি মৃত্যু নিবন্ধন সনদ ইস্যু করতে ২০০ আদায় করছে। যা নিয়ম বহিঃর্ভূত।”
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদে কর্মরত দফাদার আশরাফ হোসাইন বলেন,”কিছু লোক চেয়ারম্যানের সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য অপ্রচার চালাচ্ছে। মৃত্যু নিবন্ধন ইস্যু করতে ৮০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। তৎমধ্যে ৫০ টাকা সরকার নির্ধারিত ‘ফি’। বাকি ৩০ টাকা চৌকিদারদের খরচাপাতি।
”
চৌকিদারেরা তো সরকারি বেতন ভাতা ভোগ করেন। এরপরও কেন অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে?- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন,”তারা অল্প বেতনে পোষাতে পারে না। কোন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর চৌকিদারেরা কষ্ট করে তথ্য সংগ্রহ করে। তাই তাদের নাস্তা খরচ বাবদ ৩০ টাকা নিচ্ছি।”
ছনুয়া ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা হিসেবে মিনন আক্তার হলেও; তার পরিবর্তে দায়িত্ব পালন করেন তার স্বামী কম্পিউটারের দোকানদার ফারুক। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমার ওয়াইফের বদলে আমি কাজ করি। আমার পকেটে আসে মাত্র ৩০ টাকা। বাকিটা পরিষদের সেক্রেটারী ও চেয়ারম্যান ভাল বলতে পারবে।আমার বিরুদ্ধে লিখবেন না,আপনার জন্য খরচাপাতি পাঠিয়ে দেব।
”
তবে ইউপি সচিব আনসার বললেন ভিন্ন কথা। রশীদ বিহীন টাকা আদায় করে দীর্ঘদিন যাবত অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন ইউপি সচিব আনসার উল্লাহ্।
তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন,”আমি এখন ইউনিয়ন পরিষদে ব্যস্ত আছি। আমরা ৩০০ টাকা নিচ্ছি না। ৭০ টাকা জন্মনিবন্ধন ফি, আর ৫০ টাকা কম্পিউটার অপারেটরের খরচ নিচ্ছি। মোট ১২০ টাকা নিচ্ছি।”
টাকা নেওয়ার সময় রিসিভপত্র কিংবা রশীদ দিচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন,” এত কথা বলার টাইম নেই।” বলে ফোনের লাইন কেটে দেন।
এ বিষয়ে জানার জন্য ছনুয়া ইউপি চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,”আমি জরুরি মিটিংয়ে আছি। ঘন্টা খানেক পরে ফোন দেব।”
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোমেনা আক্তারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সরকারি ফি ৫০ টাকার চাইতে ১ টাকা বেশি নিলে ছাড় দেওয়া হবে না। আপনি ভুক্তভোগীকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলুন। লিখিত অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নিবো।”
0 মন্তব্যসমূহ