মোঃ বেলাল উদ্দিনঃ
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার এক সময়ের খরস্রোতা জলকদর খাল দখল আর দূষণে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। খালের দু পাশের চর দখল করে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট নির্মাণ,বাঁধ দিয়ে অবৈধ মাছ চাষ,ময়লা আবর্জনায় পানি দূষণের কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে উপজেলার একমাত্র জলকদর খালটির। । ভরা জোয়ার না আসলে এই খাল দিয়ে বর্তমানে নৌ চলাচল করতে পারেনা । ছোটখাটো নৌকা যা চলতেছে তাও পানি প্রবাহ অবরুদ্ধ হয়ে চলাচলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বড় ধরনের লবণ বোঝাই বোট গন্তব্যে পৌঁছার উদ্দ্যেশ্যে ছাড়তে জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এতে করে বাঁশখালী থেকে অন্যান্য এলাকায় মালামাল পরিবহনে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে সুবিধা-বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন জলকদর খালের পাশে বসবাসরত কয়েক লক্ষাধিক মানুষ।
জানা যায়,বাঁশখালীর বুক চিড়ে প্রবাহিত জলকদর খালটি বাঁশখালীর প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের যাতায়াত ও ব্যবসায়ীদের অন্যতম মাধ্যম। দীর্ঘকাল যাবত এই খালটি প্রভাবশালীরা গ্রাস করে রেখেছে । একদিকে প্রভাবশালীদের দখল অপরদিকে খালটি সংস্কার না হওয়ায় সরু হয়ে গেছে। এক সময় বাঁশখালীর মানুষ নৌকা ও সাম্পানের মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে এই খাল দিয়ে সকল মালামাল নিয়ে আসতো । এই খালটির দৈর্ঘ্য ৪৭ কিলোমিটার প্রস্থ্য ৬৭মিটার।
জলকদর খালটি বাঁশখালীর সাধনপুর থেকে ছনুয়ায় গিয়ে বঙ্গোপসাগর বঙ্গোপসাগরের প্রণালিতে গিয়ে মিশেছে।
রাজখালী,ছনুয়া,শেখেরখীল,পুঁইছড়ি,গন্ডামারা,সরল,খানখানাবাদ,শীলকূপ,বাহারছড়া মধ্যবর্তী প্রবাহিত হয়ে আবারো সাধনপুরে গিয়ে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় গিয়ে মিশেছে খালটি । তৎকালীন বিএনপি সরকার ও বর্তমান আ.লীগ সরকারের আমলে জলকদর খালের উপর দিয়ে জনসাধারণের যাতায়াতের জন্য ডজনেরও বেশি ব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছে। বর্ষাকালে বাঁশখালীর বেশিরভাগ পানি নিষ্কাশন হয় এই খাল দিয়ে।খালটির দু’পাশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টি হলে দু’তীরে বন্যার সৃষ্টি হয়ে বেড়িবাঁধ তলিয়ে যায় প্রতিবছর। অনেক সময় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে অহরহ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খালটির উপর দিয়ে ভূমিদস্যুদের স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক পড়েছে।ফলে স্বাভাবিক গতিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় এখন প্রায় বন্ধ হয়ে নৌ চলাচল।
স্থানীয়দের দাবি,খালটি খনন করে স্বাভাবিক গতিতে ফিরিয়ে নেওয়া ও দখল উচ্ছেদ করে প্রতিবন্ধকতা দূর করা। তাহলে এ অঞ্চলের নদীকেন্দ্রিক লাখো মানুষের জীবনযাত্রা সহজ হয়ে উঠবে বলে মনে করেন সচেতন মহল।
এব্যাপারে বাঁশখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক সোলতানুল আজিম চৌধুরী এ প্রতিবেদককে বলেন,” জলকদর বাঁশখালীর অনেক ঐতিহ্য বহন করে।এই খালের অনেক ঐতিহাসিক-বাণিজ্যিক ঘটনা রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিরাপত্তাজনিত কারণে এই খাল অনেক ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে। যা কর্তৃপক্ষের নজরে এনে বাঁশখালীর হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা যায়।”
তিনি আরো বলেন,এ বিষয়টি ভূমিমন্ত্রী ও হাইকোর্টের নজরে আনা যায়। তাহলে কোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে একটি আদেশ দিতে পারে। ডিসি ও ভূমিমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেয়া যেতে পারে।"
এ ব্যাপারে ছনুয়া ইউপি চেয়ারম্যান এম. হারুনুর রশীদ বলেন,”জলকদর খাল বাঁশখালী উপকূলের মানুষের জন্য আল্লাহর রহমত। জীবিকার তাগিদে এই খালে মাছ আহরণ করে এই এলাকার লোকজন।
অপরদিকে খালটি গলার কাঁটাও। দুপাশ জবর দখল হওয়ায় পানি সহজে নিষ্কাশন হতে পারে না। ফলে বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বন্যার সৃষ্টি হয়। আমি বিষয়টা উপজেলা সমন্বয় সভায় তুলে ধরব।”
এব্যাপারে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোমেনা আক্তার মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, জলকদর নামের কোন খালের তথ্য আমার কাছে নেই। দখলের বিষয়টি খতিয়ে দেখে ভূমিদস্যুদের আইনের আওতায় আনা হবে।
এদিকে সচেতন মহল বাঁশখালীর ঐতিহ্যবাহী জলকদর খালটি দখলমুক্ত ও খনন করে স্বাভাবিক গতিতে ফিরিয়ে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও বাঁশখালীর এমপি আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
0 মন্তব্যসমূহ