অলক শুভ্রঃ
"যদি বলা হত প্রেম ভালো, আনন্দ ভালো, প্রেমের জন্য প্রতীক্ষা ভালো, আনন্দের জন্য প্রতীক্ষা ভালো, তাহলে পৃথিবীর চেহারা হয়তো এত কদর্য হতো না।"
নারীর প্রেম মানবজীবনে উচ্চতর সাংস্কৃতিক জীবনের দৃষ্টান্ত। প্রতিটি ধর্ম নারীকে উচ্চাসনে বসাতে রাজি নয়। নারীকে বিষের দৃষ্টিতে দেখেছে প্রতিটি ধর্ম। প্রতিটি ধর্মের মধ্যে রয়েছে বৈরাগ্যবাদের বীজ। কোন কোন ধর্ম নারীকে ঘিরে সঙ্গীত-নৃত্যের মারফতে ইন্দ্রজাল সৃষ্টিতে আপত্তি জানিয়েছে। সঙ্গীত বা নৃত্য তাদের দৃষ্টিতে কামাচারের দৃষ্টান্ত। এর ফলে নারী বিশুদ্ধ বা সূক্ষ্ম উপভোগের বদলে স্থুল অমার্জিত ভোগের বস্তুতে পরিণত হয়। অথচ নারী হতে পারত সৃষ্টিশীল বুদ্ধির প্রেরণা, উচ্চতর সাংস্কৃতিক জীবনের সহায়ক। কাম বা যৌনতার ব্যাপারে বিধি-নিষেধের কারণে ভোগবাদী মানুষ তাতেই আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। সম্ভোগকে অতিক্রম করে প্রেম ও আনন্দে উন্নতি হতে পারে না। নিষিদ্ধ বস্তুর গুণ এই যে, তা একদিকে ভীতর, অন্যদিকে আকর্ষণের। এ দুয়ের সংঘর্ষে মানবজীবনে নেমে আসে বিকৃতি। আমি মনে করি যদি ধর্মে বলা হত যৌন বিষয় মন্দ নয়, প্রেম উত্তম ও আনন্দের তাহলে আজকের কদর্য পৃথিবীর চেহারাটা থাকত না। প্রেমের দ্বারা যদি কাম নিয়ন্ত্রিত হত তবে ব্যভিচার ও সংঘাত থেকে মানবসমাজ মুক্তি পেত। মানুষ হতে পারত সহজ ও সুন্দর। তা না করে সামাজিক নীতি নির্ধারকেরা মানুষকে আত্মসংযমের নামে আত্মপীড়নের শিক্ষা দিলেন। এ সংযম কোন মহৎ বিষয়ের জন্য তা না বলে তারা কেবল স্বর্গের লোভ দেখালেন।
"অমৃতকে কামনা, তথা প্রেমকে কামনা, সৌন্দর্যকে কামনা, উচ্চতর জীবনকে কামনা, এই তো সংস্কৃতি।"
সংস্কৃতি এমন মানবীয় আচরণবোধ যার দ্বারা ব্যক্তি বিকশিত হয় এবং আত্মার মুক্তি ঘটায়। ধর্ম যেখানে আচারের দ্বারা মানুষের আত্মার স্বাধীন বিকাশকে খর্ব করে, তেমনি রাজনৈতিক মতবাদও অন্যসব মতবাদকে অস্বীকার করে নিষ্ঠুর হয়ে ওঠে। অথচ সংস্কৃতি সত্য দর্শন ও মুক্তির আলোকে পরমত সহিষ্ণুতার পরিচয় দেয়। নরীর প্রেম ও সৌন্দর্য একজন সংস্কৃতিবানের কাছে বড় সম্পদ। এ প্রেম ও সৌন্দর্য সাধনার ধন হয়ে উচ্চতর জীবন গড়ার লক্ষ্যে মনুষ্যত্ব এবং মূল্যবোধের অর্জনের সহায়ক হয়। সংস্কৃতি মানুষের আত্মার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। কেননা, জ্ঞানের দ্বারা প্রেমকে বিশুদ্ধ করে নেন, সংস্কৃতিবানগণ। অন্যদিকে, সংস্কৃতি স্থুল জীবন চর্চাকে অনুমোদন করে না। জীবনের সাথে প্রেম, সৌন্দর্য এবং উন্নতিবোধের সংযোগ ঘটানোই সংস্কৃতির ধর্ম।
0 মন্তব্যসমূহ