মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিনঃ
ছনুয়া ও কুতুবদিয়ার জনসাধারণের পারাপারের একমাত্র মাধ্যম ছনুয়া মনুমিয়াজী জেটিঘাট। কুতুবদিয়ার মানুষ বিভিন্ন কাজে এই ঘাটটি ব্যবহার করে। তাছাড়া ছনুয়ার লোকজনও বিভিন্ন কাজে কুতুবদিয়ায় যাতায়াত করে। কুতুবদিয়ার শহরমুখী হাজার হাজার মানুষ ও শিক্ষার্থীরা এই ঘাট দিয়ে পার হয়। তাছাড়া এই ঘাটের নিকটবর্তী নৌবাহিনীর আঞ্চলিক ক্যাম্প হওয়ায় নৌবাহিনীর বিশালাকারের জাহাজ এই ঘাটে ভিড়ে ও নিত্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আনা-নেওয়া করে। তারা জলদস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযানে যেতে ও টহল কাজে এই ঘাট ব্যবহার করে। এছাড়া লবণ ব্যবসায়ীরা তাদের লবণ বাজারজাত করেন এই ঘাট দিয়ে। কিন্তু অজানা কারণে এই ঘাটের মেরামত হচ্ছে না। অথচ সরকার প্রতিবছর এই ঘাট থেকে লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করে। এই ঘাটটিতে মাত্র তিন-চার জন যাত্রী উঠলে তরতর করে কাঁপে। এতে যাত্রীরা আল্লাহর নাম জপে আতংকের মধ্যে এটি পার হন। জরাজীর্ণ এই ঘাটটি পার হতে এই এলাকার মানুষের সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এই ঘাটটি যেকোনো সময় সাগরের অথৈ পানিতে তলিয়ে যেতে পারে।
স্থানীয়রা জানান, এই ঘাটটি নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে। নৌ মন্ত্রণালয় থেকে কাঠ দিয়ে এই ঘাটটি সংস্কার করা হলেও ৬ মাস টেকশই হয় না। বঙ্গোপসাগরের জোয়ারের পানির স্রোত ও প্রবল ঢেউয়ে জেটির কাঠগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
জনগুরুত্বপূর্ণ এই ঘাটটি পাকাকরণ ছাড়া উক্ত সমস্যা সমাধান হবে না বলে মনে করেন সচেতন মহল।
সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়,জেটিঘাটটি র্দীঘদিন যাবৎ সংস্কার না হওয়ায় জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন পার হচ্ছেন হাজার হাজার যাত্রী।
জানা যায়, কুতুবদিয়ার পীরে কামেল হযরত মাওলানা আবদুল মালেক আল কুতুবী প্রকাশ মালেক শাহ হুজুরের এর মাজার জেয়ারত করার জন্য দেশ বিদেশের হাজার হাজার ভক্ত অনুরাগী মাজার জিয়ারত করতে আসে এই জেটি দিয়ে। অধিকাংশ মানুষের কুতুবদিয়া যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম এই ছনুয়া জেটিঘাট। অন্যদিকে কুতুবদিয়ার ছনুয়ার অধিকাংশ লবণ ও বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ট্রলার প্রতিনিয়ত এই ঘাটটি ব্যবহার করে থাকে।
ছনুয়া মনুমিয়াজী জেটিঘাট এলাকার ব্যবসায়ী আহমদ কবির সওদাগর বলেন, "মানুষ ছনুয়া জেটি পার হতে ব্যাপক ভয়। কখন যেন নিচে ভেঙ্গে পড়ে। তাই কুতুবদিয়া বাঁশখালীর পারাপরের একমাত্র অবলম্বন ছনুয়া জেটিঘাটটি মেরামত করা অতী জরুরী হয়ে পড়েছে। কারণ এই জেটি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এ ঘাট দিয়ে পারাপার করে থাকে, শীঘ্রই এই জেটি ঘাটটি মেরামত করা না হলে যেকোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
ছনুয়া মনুমিয়াজী জেটিঘাটের ইজারাদার শমসের শরীফি এ প্রতিবেদককে বলেন, সাগরের প্রবল স্রোতের তোড়ে ও তীব্র জোয়ার ভাটার কারণে জেটি ঘাটটি ব্যবহার খুবই বিপদজনক। অনেক সময় গাছের তক্তাগুলো ভেঙ্গে দুর্ঘটনার শিকার হয় সাধারণ পথচারীরা। এই জেটিঘাটটি প্রতি বছর সরকারী ভাবে ৪-৫ লক্ষ টাকা টেন্ডার হয়। অথচ পেকুয়া মগনামা ঘাট এবং কুতুবদিয়া বড়ঘোপ ঘাট ও দরবার ঘাট পাঁকা হওয়ায় চলাচল সহজ হলেও মানুষের যাতায়ত একই। ছনুয়া ঘাটটি পাঁকাকরণ করা হলে মানুষের দুঃখ আর থাকবে না। সহজভাবে মানুষেরা চলাচল করতে পারবে। অনেক সময় আমরা নিজস্ব অর্থায়নে ঠিক করলেও কিছুদিন পর আবার ভেঙ্গে যায়। তাই সরকারী ভাবে এই জেটিঘাটটি পাকা করে দেওয়া হলে সাধারণ মানুষের অনেক কষ্ট কমে যেত।"
তিনি আরো জানান, এ ঘাট দিয়ে চলাচলের মত অবস্থা এখন নেই বললেই চলে। তাই এই ঘাটটি পাকা ভাবে র্নিমাণ করার জন্য বাঁশখালী আসনের সংসদ আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সুদৃষ্টি কামনা করি।"
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ অভ্যান্তরিন নৌ পরিবহন (বিআইডব্লিউটিএ) চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক নয়ন শীল জানান, "ছনুয়া জেটি ঘাট সংস্কার করার জন্য ইতিমধ্যে ১২ লক্ষ টাকার টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। আগামী দুই এক মাসের মধ্যে সংস্কার করা হবে।"
0 মন্তব্যসমূহ