চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী থানাধীন ৪নং বাহারছড়া ইউপির পূর্ব ইলশা গ্রামের গাজীর পাড়ার সাথে লাগানো পশ্চিম পার্শ্বে অবৈধ ভাবে ইট ভাটা স্থাপনের অভিযোগ উঠে। একই এলাকার চৌধুরী ব্রিকস ওয়ার্কস এর সত্বাধিকারী মরতুজা আলী চৌধুরী বিগত ১ বছর পূর্বে মানুষের কৃষি জমি দখল করে ঐ ইট ভাটা স্থাপন কাজ শুরু করেন। এ নিয়ে স্থানীয় লোকজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স ও কৃষি বিভাগের অনুমতি সহ প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র না থাকায় বিগত ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার ঐ অবৈধ নির্মাণাধীন ইট ভাটার নির্মাণ কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন। কয়েকদিন বন্ধ রাখার পর নির্বাহী কর্মকর্তার নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে পুনরায় অবৈধ ইট ভাটার নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করে কয়েকবার ইট তৈরী করে। ঐ সময় স্থানীয় বাকর আলী তালুকদার জামে মসজিদের ওয়াকফ ভূমির ১৬ শতাংশ দখলের বিষয়েও মুসল্লিরা বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন। তবুও তেমে ছিল না ঐ অবৈধ ইট ভাটার কার্যক্রম। একপর্যায়ে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নির্দেশ অমান্য করে অবৈধ ভাবে ইট ভাটা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ায় মরতুজা আলী চৌধুরীর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় প্রধান ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবরে ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। দীর্ঘ কয়েকমাস বন্ধ থাকার পর কিছুদিন আগে থেকে মরতুজা আবার ঐ অবৈধ ইট ভাটা সংস্কারের কাজ শুরু করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, মরতুজা আলী চৌধুরী তার ‘চৌধুরী ব্রিকস ওয়ার্কস’ নামীয় ইট ভাটার ৫০ গজ দুরত্বেই পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় কৃষি জমি দখল করে নতুন এই অবৈধ ইট ভাটা স্থাপন করেন। ঐ অবৈধ ইট ভাটার চারিপাশে রয়েছে বসতি ঘর-বাড়ী ও মসজিদ। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনের ২০১৩ অনুচ্ছেদ ৮-এর (ঘ) ও (ঙ) ধারা অনুযায়ী, কৃষি জমি ও পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় ইটভাটা স্থাপন দণ্ডনীয় অপরাধ।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার জানান, এই বিষয়ে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে গতবছর অভিযোগ পেয়ে তদন্ত করে ঐ ইট ভাটা বন্ধ করে দিয়েছেন। এবছরও এলাকাবাসীর পক্ষ ঐ ইট ভাটার বিষয়ে পুনরায় আরেকটি অভিযোগ পেয়েছেন, একই অভিযোগ পরিবেশ অধিদপ্তরকেও দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে, যদি পুনরায় ইট ভাটাটি চালু করা হয় তিনি আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।
এলাকার তিনজন বাসিন্দা জানান, গত বছরই এই ইট ভাটা চালু করা হয়েছে। কিন্তু যেখানে করা হয়েছে, সেখানে কোনোভাবেই ইটভাটা স্থাপনের জন্য উপযুক্ত নয়। কারণ, ভাটার পুরো অংশই জনবসতি ও কৃষি জমির উপর স্থাপন করা হয়েছে। এর চারপাশে কয়েক হাজার মানুষের বসবাস। তাঁরা জানান, কিছু নিরীহ লোকজনের জমি দখলপূর্বক ভাটাটি স্থাপন করে। অবৈধ ইট ভাটায় কাঠ পোড়ানোর ধোঁয়ায় মানুষের স্বাস্থ্যসমস্যার পাশাপাশি পরিবেশও মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে বলে তাঁদের শঙ্কা।
ইটভাটাটির কাজের দেখাশোনা করেন মরতুজা আলী চৌধুরীর ভাতিজা শাহাদাত হোসেন চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি। তিনি মুঠোফোনে বলেন, স্থানীয় লোকজনদের নিকট থেকে ১০ বছরের জন্য জমি লিজ নিয়ে ‘চৌধুরী ব্রিকস ওয়ার্কস’ নামীয় ২য় ইট ভাটা চালু করা হয়েছে। গত বছর এই ইট ভাটাটি নির্মাণের সময় স্থানীয় কিছু লোকজন তাদের পূর্বশত্রুতার জের ধরে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি এই ইট ভাটার কাজ বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দিলেও পরে একটি মহল থেকে অনুমতি নিয়ে নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করে ২/৩ বার ইট তৈরী করেছিলেন। পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের কোনো অনুমোদন আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা আবেদন করব।' এছাড়াও তাদের কাছে হাই কোর্টের রায় কপি রয়েছে এবং ঐ রায়ের মধ্যে জেলা প্রশাসককে লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে ছাড়পত্র দেওয়ার জন্য নির্দেশনা রয়েছে বলে তিনি জানান।
এই ইটভাটার মালিক মরতুজা আলী চৌধুরী এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এছাড়াও তিনি চেক জালিয়াতি মামলার এক বছরের সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী সহ তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
এলাকাবাসীর দাবী অবৈধ ইটভাটার কারণে আশেপাশে ধান, সবজি, আম, কাঁঠাল, নারিকেলসহ বিভিন্ন ফলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে একদিকে কৃষির যেমন ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে এলাকার স্বাভাবিক পরিবেশ মারাত্মকভাবে নষ্ট হয়ে রোগবালাই দেখা দিচ্ছে। অন্যদিকে ইটভাটা মালিকেরা কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি হিসাবে কাঠ পোড়াচ্ছে। আইন অমান্য করে জমি মালিকদের টাকার প্রলোভন দিয়ে কিংবা জোরপূর্বক ফসলি জমির উপরি ভাগের মাটি কেটে ইট তৈরির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই অবৈধ ইট ভাটা বন্ধ সহ ভুক্তভোগীদের জমি উদ্ধারের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
0 মন্তব্যসমূহ