চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার প্রায় ৯টি উপকুলীয় ইউনিয়নের প্রায় ৫ লাখের ও অধিক লােক প্রতিনিয়ত বঙ্গোপসাগর ও শঙ্খ নদীর সঙ্গে যুদ্ধ করেই বেঁচে আছে। কারন বর্ষার মৌসুম আসলেই শুরু হয়ে যায় বন্যা আর ঘুর্ণিঝড় এর আতংক।কোন সময় জানি জীবনের সব কিছু নিয়ে যায় সর্বনাশা বঙ্গোপসাগরে।
১৯১৯ সালের ২৯এপ্রিলের মহা প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় এর কথা আজও ভুলেনি বাঁশখালীর উপকূলবাসী। প্রতিবছর বর্ষা আসলেই স্মরণ করিয়ে দেই সেই ৯১ এর তুফানের কথা। তারা আতংকে থাকে বেশি বর্ষা কালে।বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় এর কবল হতে রক্ষা পেতে তারা স্থায়ী বেড়িবাঁধ ও নদী ও খালবিল ও জলাশয়ের সংস্কার চান উপকূলবাসী।
এদিকে বাঁশখালীর উপকূলীয় প্রায় ১৩ টি ইউনিয়নের একমাত্র ভরসা জলকদর খালটি চলে গেছে অবৈধ দখলদারদের কবলে।যেটির কারনে বাঁশখালীর উপকুলীয় ইউনিয়ন গুলুতে নিন্মভূমি গুলু বর্ষার বন্যার পানি,পাহাড়ি ঢল ও জোয়ার হতে রক্ষা পায় বাঁশখালীবাসী।
বর্ষার মৌসুমে বৃষ্টির পানি ও জোয়ারের পানিতে যখন সারা বাঁশখালী পানিতে ডােবে যায়,তখন এই জলকদ খালটিই একমাত্র উপকূল বাসীর
ভরসা হয়ে দাঁড়ায়।কারন এটি দিয়ে জোয়ার ও বৃষ্টির পানি শঙ্খনদী হয়ে
বঙ্গোপসাগরে চলে যায়। যদি এই জলকদর খাল না থাকে তাহলে বাঁশখালী বাসী সারাবছর পানির নিচে থাকবে।
প্রসিদ্ধ এই খালটি শঙ্খনন্দী হয়ে খানখানাবাদ ইউনিয়নের অভ্যন্তর হয়ে ৪নং বাহারছড়া ইউনিয়ন,কাথরিয়া, সরল,গণ্ডামারা,শীলকুপ, ছনুয়া ও শেখেরখীল ইউনিয়নের মধ্যবর্তী হয়ে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পৌঁছেছে।
এক সময় চট্টগ্রাম শহর হতে বাঁশখালীতে যাতায়াত ও ব্যবসায়ীদের মালামাল আনা নেয়ার একমাত্র যােগাযােগ ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছিল। এমন কি এই খাল দিয়ে চট্টগ্রাম কর্ণফুলী নদী হতে গন্ডামারা হয়ে কুতুবদিয়া, মগনমা হয়ে সংখনদী হয়ে বঙ্গোপসাগরে বিভিন্ন সাম্পান, বােট, নৌকা, স্পিট বােট, ট্রলার ইত্যাদি প্রতিদিন চলাচল করত।
দুঃখের বিষয় দীর্ঘদিন ধরে এ খালটির দুপাশের অবৈধ দখলদারদের দখল ও সংস্কার না করায় সরু হয়ে পড়েছে।প্রতিনিয়ত হারিয়ে যাচ্ছে তার নিজস্ব চুরতহাল। খালটিতে আর কোন নৌকা বা চাম্পান চলাচল করে না।এমন কি বর্তমানে তা বাঁশখালীর মানচিত্র হতে মুছে ফেলা হচ্ছে।
কারা উপকুলবাসী কে আশ্রয়হীন করতে চাচ্ছে তাদের খোঁজে বের করে সনাক্ত করন না হলে এবং তাদের অবৈধ দখলদারিত্ব হতে এই খালটি রক্ষা করা না হলে উপকুলীয় অসহায় জনগনের জানমানের নিরাপত্তা থাকবে না বলে মনে করছে স্থানীয় ভুক্তভােগী মহল।
বাঁশখলীর উপকূলবাসী যারা জলকদর খালের উপর ভরসা করে জীবন অতিবাহিত করে তারা এখন হয়ে পড়েছে ভরসাহীন। তারা জলকদর খাল রক্ষায় সাহায্য চেয়ে দৈনিক আমার সময় পত্রিকার মাধ্যমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জনপ্রশাসন এর নিকট জোরালাে আবেদন জানিয়েছে।
বর্ষা আসলেই আতংকে থাকে তারা।কারন জোয়ার ও বৃষ্টি পানি কোথাও চলাচল করতে না পেরে তাদের ঘর-বাড়ীর উপরে চলে আসে।ভিটা -বাড়ী চলে যায় পানির নিচে। ফলে তাদের অবস্থা হয় দূর্বিষহ। এমন চিত্র দেখা যায়, বিশেষ করে বাহারচড়ার রত্নপুর,ইলশা গ্রামে।সেখানে প্রায় এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যায় বর্ষার মৌসুমে।
জনগুরুত্বপূর্ণ এই খালটি হয়ে প্রায় ৮টি উপকূলীয় ইউনিয়নের পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানি অনায়াসে প্রবাহিত হতে না পারলে বন্যার পানিতে ডুবতে হবে ইউনিয়ন গুলুর বাসিন্দাদের। আর এ খালের সঙ্গে বাঁশখালীর পূর্বাঞ্চলের ৮টি পাহাড়ি ছড়ার প্রবাহিত পানি খালে নামার জন্য অবস্থিত অধিকাংশ চুইসগেটগুলাে নানাভাবে দখল ও বন্ধ থাকায় একটু বৃষ্টিতেই বন্যা সৃষ্টি হয় খালের পূর্বাঞ্চলের এলাকাগুলােতে।
খালটি অবিলম্বে সংস্কারসহ অবস্থিত চুইসগেট গুলাের যথার্থভাবে সংস্কার করা না হলে বর্ষা মৌসুমে সাধারণ জনগণ পাহাড়ি ঢল ও বন্যার হাত হতে রক্ষা পাবে না। এই জলকদর খাল বাঁশখালীর উপকূলবাসীর জীবন রক্ষা পাওয়ার একমাত্র ভরসা এবং বাঁশখালীবাসীর অতিয্য ও বটে।
কিন্তু তা এখন অবৈধ দখলদারদের কবলে পড়ে বাঁশখালীর মানচিত্র হতে চিরতরে হারিয়ে যেতে চলেছে।এই জনগুরুত্বপূর্ণ খালটি রক্ষায় বাঁশখালীর সাংসদ আলহাজ্ব মােস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এমপি সহ স্হানীয় জনপ্রতিনিধি ও জনপ্রশাসন এর নিকট জোরালাে আবেদন জানাচ্ছে ভুক্তভােগী বাঁশখালীবাসী।
0 মন্তব্যসমূহ