২১ এপ্রিল ২০২০ বৃহস্পতিবার সকাল ১০ ঘটিকায় বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় করোনা ভাইরাস (Novel Covid-19) সন্দেহভাজন রোগীদের নমুনা সংগ্রহ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। হাসপাতাল অভ্যন্তরে বহিঃবিভাগে স্থাপনকৃত করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) নমুনা সংগ্রহের বুথে সন্দেহভাজন কয়েকজন রোগীর নিকট হতে নমুনা সংগ্রহ করে মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ল্যাব) পরিতোষ বডুয়া। জানা যায় সরকারি নিদের্শনা মোতাবেক ইপিঅাই টেকনিশিয়ান মুহাম্মদ জয়নুল অাবেদীন মাহবুব'র ক্লোড চেইন মেইনটেইনসহ সার্বিক কাজে সহযোগিতার কথা থাকলেও সংশ্লিষ্ট কাজে তাকে অনুপস্থিত পাওয়া যায়। এর ফলে দৈনন্দিন নমুনা সংগ্রহ কর্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী বলে - ইপিঅাই টেকনিশিয়ান দীর্ঘদিন যাবৎ একই কর্মস্থলে কর্মরত থাকার কারনে হাসপাতালে অদৃশ্য এক সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে এবং তার সাথে উপর মহলের অনেক জানাশুনা। ক্ষমতা ও টাকার প্রভাব কাটিয়ে স্বাস্থ্য সহকারী থেকে প্রথমে নিজ বেতনে ইপিঅাই টেকনিশিয়ান পরে নিয়মিতর অাদেশ নিয়ে পদটি পুরোপুরি ভাগিয়ে নেয়। তাছাড়া টিকা দিয়ে উৎকোচ অাদায়সহ টিকা প্রতি ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত অাদায় করে বলে জানায় কর্মচারীরা। শুধু তাই নয় মাঠ পর্যায়ে ভ্রমণে না গিয়ে ভূয়া মাসিক ভ্রমণ ভাতার বিল উত্তোলন করে চলেছে। এছাড়া পরিবহন, ষ্টেশনারী ও কর্মস্থলে না থেকে অতিরিক্ত কাজের টিপিন ভাতার বিলও অবাধে উত্তোলন করতেছে।
এই বিষয়ে মুঠোফোনে ইপিঅাই টেকনিশিয়ান মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন মাহাবুব বলে - অামি বাড়ীতে অাছি ও অাজ সরকারি বন্ধ তাই হাসপাতালে অাসিনি। তাছাড়া নমুনা সংগ্রহ ও উক্তকাজে সহযোগিতা করা অামার কাজ না। বর্তমানে অামি এমঅার ক্যাম্পেইন'র বিল ভাউচার প্রস্তুতে ব্যস্ত অাছি।ক্লোড চেইন বাক্স অামার পোর্টার বের করে রাখছে। অার কিছু জানার থাকলে টিএইচও'র সাথে কথা বলতে পারেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্থানীয় কতৃপক্ষের পত্র মোতাবেক ইপিঅাই টেকনিশিয়ান'র নমুনা সংগ্রহের সার্বিককাজে সহযোগিতা ও ক্লোড চেইন মেইনটেইন এর দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও ক্ষমতার প্রভাব কাটিয়ে এই সংক্রান্ত দায়িত্ব পালন করছে না। কিন্তু কেন? বাঁশখালী উপজেলায় দিন দিন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। একজন মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ল্যাব) দিয়ে পুরো বাঁশখালীতে নমুনা সংগ্রহ সম্ভব! এই নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন সচেতন মহলে। বর্তমানে অত্র উপজেলায় করোনা ভাইরাসে অাক্রান্তের সংখ্যা ২১। এই কারনে মাঠ পর্যায়ে অধিক নমুনা সংগ্রহ করা হলে করোনা ভাইরাসে অাক্রান্তের হার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অাছে বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু এখনো স্থানীয় কতৃপক্ষ নিরব ভূমিকা পালন করছে।
হাসপাতালের সাবেক অনিয়মিত শ্রমিক মোঃ মিজবা বলেন - অামি হাসপাতালে অনিয়মিত শ্রমিক(পোর্টার) হিসেবে কর্মরত ছিলাম। ইপিঅাই টেকনিশিয়ান জয়নুল অাবেদীনকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে না পারায় বিনা কারনে অামাকে চাকরী থেকে বের করে দিয়ে টাকার বিনিময়ে মোঃ অাইয়ুব নামে একজনকে চাকরী পাইয়ে দেয়। অামি এই ঘুষখোর কর্মচারীর বিচার দাবী করছি এবং চাকরী ফেরত চাচ্ছি।
অারো জানা যায় কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার, সিবিএইচসি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মহাখালী, ঢাকার স্মারক নং- ১১৩৫ তারিখঃ ১৬-০৪-২০২০ইং মূলে ইউনিয়ন তথা কমিউনিটি ক্লিনিক লেভেলে সিএইচসিপিদের নমুনা সংগ্রহের নিদের্শনার প্রেক্ষিতে বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্মারক নং-৪৮১ তারিখঃ ১৬-০৫-২০২০ইং মূলে পত্র ইস্যু করা হলেও স্থানীয় কতৃপক্ষ অজানা কারনে সিএইচসিপিদের নমুনা সংগ্রহ না করতে বলে দেয়। এই কারনে কমিউনিটি লেভেল পর্যায়ে নমুনা সংগ্রহ স্থবির হয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। অধিদপ্তরের প্রজ্ঞাপণ অনুযায়ী দৈনিক ১০ টি নমুনা সংগ্রহ পূর্বক প্রেরণের নির্দেশ অাছে কিন্তু তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
এই বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ শফিউর রহমান মজুমদার বলেন - ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তা/ কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ইপিঅাই টেকনিশিয়ান'র দায়িত্ব অবহেলার জন্য তাকে পূর্বে কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে। নিয়মিত নমুনা সংগ্রহের কাজে সার্বিক সহযোগিতাসহ ক্লোড চেইন মেইনটেইন করে চট্টগ্রামস্থ বিটিঅাইটিতে প্রেরণ নিশ্চিত করা ইপিঅাই টেকনিশিয়ান এর দায়িত্ব।
অাজকে অনুপস্থিতির বিষয়ে অামি কিছু জানি না। সিএইচসিপিরা নমুনা সংগ্রহে অনিচ্ছা প্রকাশ করায় তা গতকাল মৌখিকভাবে বাতিল করেছি।
উল্লেখিত কর্মচারীকে স্ব-পদে বহালসহ অন্যত্রে বদলী ও বিভাগীয় ব্যবস্থার দাবী জানিয়েছে বাঁশখালীর সচেতন মহল।
0 মন্তব্যসমূহ