মোহাম্মদ এরশাদঃ
সারাদেশে সরকারি বরাদ্দকৃত গরীব,দুঃখী,অসহায় মানুষের জন্য প্রতি কেজি ১০ টাকা দামের চাউল বিতরণ এর চিত্র দৃশ্যমান। বাদ পড়ে নাই বাঁশখালীর গন্তামার ইউনিয়নের বড়ঘোনা গ্রামও।
চট্টগ্রাম বাঁশখালীর ৯ নং গন্তামারা ইউনিয়নের পশ্চিম বড়ঘোনা ও পূর্ব বড়ঘোনার ৪,৫,৬,৭,৮ ও ৯ ওয়ার্ড়ের সরকারি বরাদ্দকৃত ১০ টাকা দামের ওএমএমএস এর চাউল নিয়ে গ্রাহকদের হয়রানি, হেনেস্তা ও চাউল না দিয়ে কার্ড় ছিঁড়ে দেওয়ারও অভিয়োগ ওটে গন্ডামারা ইউনিয়নের বড়ঘোনা গ্রামের নতুন ডিলার নাঈম উদ্দীন মাহফুজের বিরুদ্ধে।
১৩ জুন ২০২০ইং শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশখালীর প্রত্যন্ত অঞ্চল গন্ডামারা ইউনিয়ন। উক্ত এলাকায় হতদরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষের জন্য সরকারি বরাদ্দকৃত প্রতি কেজি ১০ টাকা দামের ওএমএসএস এর চাউল সরবরাহ করার কথা থাকলেও বাস্তবে এই ইউনিয়নের বড়ঘোনা গ্রামের ৫০/৬০ জন হতদরিদ্র ব্যাক্তিকে চাউল না দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। অথচ না পাওয়া হতদরিদ্র লোকগুলো নিয়মিতভাবে পেয়ে আসছিল।গত মার্চ ও এপ্রিল মাসেও তারা পেয়েছে। তবে মে মাসে এসে নির্ধারিত মাস শেষ জুন মাস পার হয়ে গেলেও কেন পাচ্ছে না এমন অভিযোগ নতুন ডিলার মাহফুজ এর বিরুদ্ধে। পূর্ব থেকে তালিকা ভুক্ত কার্ড়ধারী হতদরিদ্র লোক গুলো হঠাৎ বাদ পড়ায় তারা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়।
ভুক্তভোগীরা জানায়, নতুন ডিলার মাহফুজ মে মাসের ৭ তারিখ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত সোমবার, মঙ্গলবার ও বুধবার চাউল প্রথম বার বিতরণ করেছে। আমরা প্রতিবারের মতো সেই নির্দিষ্ট তারিখে চাউলের জন্য লাইনে দাঁডিয়ে অপেক্ষা করছিলাম। পরিশেষে বলা হয় আমরা চাউল পাবোনা। মূল বালাম থেকে নাকি নাম কেটে দেওয়া হয়েছে। আগে তো চাউল পেয়েছি। হঠাৎ করে পাবোনা কেন জিজ্ঞেসা করিলে ডিলার মাহফুজ বলেন, চলে যাও তোমরা পাবেনা। কেন পাবোনা বললেই আমরা বেশ কয়েকজনের কার্ড়ও ছিঁড়ে দেয়। বর্তমানে করোনা মহামারীতে কর্মহীন হয়ে আছি। এখন আমরা খাবো কি? আগের ডিলার আমাদের কে প্রতিবছর নিয়ম মতো চাউল দিয়েছে কোন ধরনের সমস্যা হয় নি। হঠাৎ নতুন ডিলার মাহফুজ আমাদেরকে চাউল না দিয়ে হয়রানি করে করোনা ক্লান্তিকাল সংকটে দূর্ভোগে ঠেলে দিয়েছে।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আগের ডিলার ১০ টাকা দামের চাউল নিয়ে কোন সমস্যা করে নাই এবং কোন ধরনের অনিয়ম দেখা যায়নি। বর্তমানে নতুন ডিলার দেখা যাচ্ছে তালিকা ভুক্ত অনেককে বাদ দিয়ে দিলো। এমনকি চাউলের কার্ড়ও ছিঁডে দিয়েছে । গত মে মাসের চাউল বিতরণের সঠিক সময় পার হয়ে গেলেও অনেকে পায়নি।
স্থানীয় জমির উদ্দীন সিকদার বলেন,চাউলের জন্য আসা কার্ড় ওয়ালা অনেক কে ফেরত দিয়েছে। একজন বৃদ্ধ অসুস্থ হওয়ায় আসতে না পেরে নিজের ছেলেকে পাঠালে তাকেও না দিয়ে ফেরত দিয়েছে।
৪নং ওয়ার্ড়ের ইউপি সদস্য আনছার বলেন,পূর্বের ডিলার আক্তার হোসেন এর বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ দেখি নাই। বর্তমান নতুন ডিলার মাহফুজ এর বিরুদ্ধে ৫০/৬০ জন তালিকা ভুক্ত কার্ড়ধারী চাউল না পাওয়ার অভিযোগ সত্য। এমনকি কয়েকজনের কার্ড়ও ছিঁড়ে দিয়েছে।
গন্ডামারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাষ্টার শামসুল আলম বলেন,আগের ডিলার আক্তার হোসেন একটু রাগী হলেও নতুন ডিলার মাহফুজ এর মতো তেমন অনিয়ম ও অভিযোগ পায়নি। নতুন ডিলার মাহফুজ এর বিরুদ্ধে শুরুতেই তালিকা ভুক্ত পুরাতন কার্ড়ধারী হতদরিদ্রদের চাউল না দেওয়ার অভিযোগ পাচ্ছি। একজন বৃদ্ধ লোককেও না দেওয়ার কথা শুনছি। এমন অভিযোগ খুব দুঃখজনক বিষয়।
পূর্বের ডিলার আক্তার হোসেন মিয়া বলেন,আমি ২০১৬ সাল থেকে ডিলার হিসেবে ছিলাম। ২০২০ সালের মার্চ ও এপ্রিল মাস পর্যন্ত নিয়ম মতো সবাইকে চাউল দিয়েছি। মে মাস থেকে নতুন ডিলার মাহফুজ এর দায়িত্ব। সে অনেক কে চাউল না দিয়ে অনিয়ম করছে। কার্ড়ও ছিঁড়ে দিয়েছে। কতৃপক্ষের কাছে এবিষয়ে তদন্ত প্রয়োজন মনে করছি।
ডিলার নাঈম উদ্দিন মাহফুজ এর সাথে কথা বললে তিনি জানায় চাউল বিতরণ আমার পেশা নয় । তবুও আমি যতটুকু সম্ভব সঠিক ভাবে চাউল বিতরণের চেষ্টা করেছি।
কেন গত মে মাসে ৫০/৬০ জনের মতো লোক চাউল পাইনি এটা আমি বলতে পারবো না। আমি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে যেভাবে দেওয়ার আছে সেভাবে দিয়েছি। নতুন করে আরো ২শত হতদরিদ্রের জন্য কার্ড সরবরাহ করার জন্য চেষ্টা করতেছি।
এ ব্যাপারে গন্ডামারা ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব লেয়াকত আলী বলেন, আমি এটা নিয়ে কোন কিছু জানি না তবে আমি এই এলাকার জন প্রতিনিধি। আমি বিরোধী দলের হওয়াতে ওএমএসএস এর ১০ টাকা দামের সরকারি চাউল কিভাবে দিচ্ছে আমি কিছুই জানি না। এগুলো তারা তারাই জানে বলে মন্তব্য করেন।
এ বিষয়ে বাঁশখালী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মংখাই এর সাথে যোগাযোগ করিলে বলেন, ২০১৬ থেকে ২০২০ এপ্রিল পর্যন্ত আক্তার হোসেন ডিলার হিসেবে ছিল। দীর্ঘদিনের ডিলার পরিবর্তন হতে পারে। কতৃপক্ষের সিদ্ধান্তে সে বাতিল হয়েছে। নতুন ডিলার নাঈম উদ্দিন মাহফুজের বিরুদ্ধে অনিয়মের তেমন অভিযোগ পায়নি। তবে আগের ডিলার এর সময়ের তালিকা ভুক্ত প্রায় ৬৪ জন কার্ড়ধারী কে উপজেলা পরিষদ কমিটি কতৃক বাদ দেওয়া হয়েছে। যাদের বাদ দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে কেউ ধনী,কেউ প্রবাসী পরিবার। আবার কেউ মারাও গেছে তাই তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে যেই পরিমাণ বাদ দেওয়া হয়েছে সেই পরিমাণ নতুন তালিকা ভুক্ত করা হয়েছে। সামনে আরো তালিকা ভুক্ত করা হবে। বাদ পড়াদের মধ্যে কেউ প্রকৃত হতদরিদ্র থাকলে তদন্ত পূর্বক পূণরায় তালিকা ভুক্ত করা হবে। যাদেরকে বাদ দেওয়া হয়েছে তাদের তালিকা গন্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লেয়াকত আলীর কাছেও পৌছানো হয়েছে। এবং উপজেলা নির্বাহীকর্মকর্তা মহোদয়ও অবগত আছেনও বলেন।
এ ব্যাপারে নির্বাহীকর্মকর্তা মোমেনা আক্তার এর সাথে যোগাযোগ করার জন্য একাধিক বার অফিসে গেলেও পাওয়া যায়নি। মুঠো ফোনেও একাধিক বার ফোন করে পাওয়া যায়নি।
0 মন্তব্যসমূহ