চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ। ভূমিদস্যুতা, জলদস্যুতা, চাঁদাবাজি, নকল স্বর্ণ ব্যবসা, অপহরণ— সবকিছুতে সমানতালে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে তার গুন্ডাবাহিনী। খোদ তার নামেই রয়েছে ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতাসহ বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত ১২টি মামলা। তার আপন ভাইয়ও ৯ মামলার আসামি। আর এসবের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে গেলেই তাকে চেয়ারম্যানের ‘পেটোয়া বাহিনীর’ ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হতে হয়।
গত শনিবার (২১ আগস্ট) ছনুয়ার সরলিয়া বাজার ব্রীজ এলাকা থেকে জয়নাল আবেদীন মানিক নামের এক যুবককে তুলে নিয়ে মারধর করে চেয়ারম্যান বাহিনীর সদস্যরা। এরপর তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়ে হাত, মুখ ও পা বেঁধে চেয়ারম্যানের বাড়িতে মারধর করা হয়। সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি মারধরে চেয়ারম্যানের বাড়িতেই হুঁশ হারিয়ে ফেলেন মানিক।
পরে স্থানীয়রা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে ঘটনার বিষয়ে অবগত করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হলে সন্ত্রাসীরা আহত অবস্থায় মানিককে ফেলে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদের ছোট ভাই আলমগীর কবিরকে প্রধান আসামি করে ৮ জনের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী জয়নাল আবেদীন ওরফে মানিক।
কি কারণে এভাবে তুলে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে— জানতে চাইলে গুরুতর আহত জয়নাল আবেদীন ওরফে মানিক মুঠোফোনে বলেন, ‘পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তারা আমার উপর হামলা চালিয়েছে।’
এমন নির্যাতনের ঘটনার মুখোমুখি কেবল জয়নাল আবেদীনই নয়, হতে হয়েছে এক সংবাদকর্মীকেও। গত বছরের ২ আগস্ট চেয়ারম্যান বাহিনীর অপকর্মের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে একুশে পত্রিকার বাঁশখালী প্রতিনিধি মো. বেলাল উদ্দিনকে অপহরণ করে হত্যার চেষ্টা করে চেয়ারম্যান বাহিনীর সদস্যরা। পরে তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদের সহায়তায় র্যাব-পুলিশের তৎপরতায় তাকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত ৫ সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে বাদি হয়ে মামলা করেন সাংবাদিক মো. বেলাল উদ্দিন।
এর আগে ২০১৭ সালে আবু সিদ্দিক নামের এক স্কুল শিক্ষককে তুলে নিয়ে হত্যাচেষ্টা করেন চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদের অনুগত সন্ত্রাসীরা।
সবশেষ গত সোমবার (২৩ আগস্ট) গুপ্তধন বিক্রির কথা বলে এক ব্যক্তির কাছ থেকে দশ লাখ ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে এই ‘চেয়ারম্যান বাহিনীর’ বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে রাঙামাটির সুবলং এলাকার বিজয় কেতন চাকমা বাদী হয়ে চেয়ারম্যানের ছোট ভাই আলমগীর কবিরসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৪-৫ জনের বিরুদ্ধে বাঁশখালী থানায় একটি প্রতারণা মামলা দায়ের করেন।
তারই প্রেক্ষিতে থানা পুলিশ গত সোমবার রাতে অভিযান চালিয়ে চেয়ারম্যান বাহিনীর সদস্য ছনুয়া বড় মাদরাসার টেক এলাকার আবুল খায়ের (৪২), ছনুয়া হাজ্বী আলী মিয়া পাড়ার ছৈয়দ আহমদ ওরফে কালামিয়ার ২য় স্ত্রী রাশেদা বেগম (৫০), কালামিয়ার পুত্রবধূ সামারু বেগম (২৫) নামে তিনজনকে আটক করেছে।
স্থানীয় ও থানা সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম শহরে চিকিৎসা করতে আসার সুবাদে নগরীর পার্কভিউ হাসপাতালে প্রতারক ছনুয়ার কামাল উদ্দিনের সাথে পরিচয় হয় বিজয় কেতন চাকমার। এসময় কামাল তাকে জানায়- তার কাছে তিন ডেক স্বর্ণ (গুপ্তধন) রয়েছে। সে এগুলো বিক্রি করবে। তার কথাতে গত ১৮ আগস্ট আহমদ কবির ওরফে মানিকের বাড়িতে যায় বিজয়। কথাবার্তার এক পর্যায়ে গুপ্তধন নেয়ার আগে মাজারে দান-খয়রাতের জন্য ৯৩ হাজার ৩শ টাকা নিয়ে নেয় স্বর্ণ মানিক। এরপর গুপ্তধন বুঝে নেয়ার জন্য তাকে পুরো টাকা নিয়ে ২৩ আগস্ট আসতে বলে।
কথামত বিজয় কেতন চাকমা প্রতিবেশী ও নিকটাত্মীয় নিউটন চাকমা, অনিল বিকাশ চাকমা, নিখেল চামকা ও পবীর চাকমাকে সঙ্গে নিয়ে সোমবার দুপুরে ৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে ছনুয়ায় মানিকের বাড়িতে আসে। তারা তার হাতে টাকা দিয়ে গুপ্তধনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। এর কিছুক্ষণ পর প্রতারক দলের মূল হোতা আহমদ কবির ওরফে স্বর্ণ মানিক, কামাল উদ্দিন, আলমগীর কবির, মোস্তাক আহমদ, আবুল খায়ের, সামারু, রাশেদা বেগম, মোস্তাক, বাদশা, আজম, নুরুল আলম, কবির আহমদ, আবদু শুক্কুর, মিরাজ এসে তাদের চলে যেতে বলে। না হয় তাদের জানে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
পরে তারা বিষয়টি বাঁশখালী থানা পুলিশকে অবহিত করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনজনকে আটক করতে পারলেও বাকিরা পালিয়ে যায়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতাসহ বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত ১২টি মামলার আসামি। ১৯৯৮ সালে ১২ বছরের কাজের মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল নগরের পাঁচলাইশ থানায়।
এছাড়া চেয়ারম্যানের ভাই মো. আলমগীর কবির অন্তত ৯টি মামলার আসামি। চেয়ারম্যানের পুরো পরিবারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, সাগরে জেলেদের আটকে চাঁদা আদায়, জলদস্যুতাসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগ আছে।
চেয়ারম্যান হারুনের বাহিনীর অন্যতম সদস্য বহু মামলার আসামি সোলতান বাহাদুর প্রকাশ বাহাদুর ডাকাত, নুরুল আলম, মো. হোসাইন ও আবু তালেব র্যাবের সঙ্গে বিভিন্ন সময় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। তাছাড়া চেয়ারম্যান বাহিনীর অন্যতম সদস্য মোহাম্মদ ইউনুস ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর র্যাবের আয়োজনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে অস্ত্র, গোলাবারুদ জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। বর্তমানে তিনি জেল হাজতে আছেন। কিন্তু বহু মামলার আসামি আলমগীর কবির ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় চেয়ারম্যান বাহিনীর অপকর্ম এখনও থেমে নেই।
এবিষয়ে বাঁশখালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা লিটন চাকমা মুঠোফোনে বলেন, ‘আলমগীরসহ প্রতারক চক্রের সবাইকে গ্রেফতারে অভিযান চলমান।’
জানতে চাইলে বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ সফিউল কবীর বলেন, ‘এ ব্যাপারে থানায় একটি প্রতারণা মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত তিন জনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদেরও শীঘ্রই গ্রেফতার করা হবে। তাদের গ্রেফতার করতে অভিযান চলছে।
সূত্রঃবিডি24 লাইভ
1 মন্তব্যসমূহ
How to withdraw winnings in casinos from bet365 in India
উত্তরমুছুনHow to withdraw winnings in casinos 나주 출장마사지 from bet365 in India. Learn how 울산광역 출장안마 to withdraw 충청남도 출장샵 winnings, and get information on bet365 bonus offers 김제 출장마사지 here. 문경 출장안마