টাকা আত্মসাৎ: বাঁশখালীতে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ৯ সদস্যের অনাস্থা

 

বিএন ডেস্ক: বাঁশখালীর কাথরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইবনে আমিনের বিরুদ্ধে পরিষদের বরাদ্দকৃত প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতাসহ ১৮টি অভিযোগ এনে অনাস্থা জানিয়েছেন ৯ সদস্য।

এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের ৯ জন ইউপি সদস্যের স্বাক্ষরিত একটি অনাস্থাপত্র বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাঈদুজ্জামান চৌধুরীর কার্যালয়সহ কয়েকটি দফতরে জমা দেওয়া হয়েছে। এতে অনুলিপি দেওয়া হয়েছে স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবকে।

অনাস্থাপত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘ ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দকৃত আটটি নলকূপ বিনা রেজুলেশনে পছন্দমত ব্যক্তির কাছে টাকার বিনিময়ে হস্তান্তর, প্রায় ২ হাজার ৩০০ নতুন ভোটারের কাছ থেকে ৬০০ টাকা করে উৎকোচ গ্রহণ, ইউনিয়ন পরিষদের পুকুর ও জমি লাগিয়তের (বর্গা) টাকা আত্মসাৎ, জাটকা নিধন প্রতিরোধে জেলেদের বরাদ্দকৃত চাউল নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া, ইউনিয়ন পরিষদ সংস্কার কাজ অনিয়ম ও আত্মসাৎ, ইউনিয়নের সড়কের সংস্কার কাজ, মাটি ভরাট, খাদ্য কর্মসুচীর টাকা আত্মসাত ও অসম্পূর্ণ কোরাম দিয়ে পরিষদের সভা সম্পন্ন করা এবং পরিষদের সদস্যদের সাক্ষর জাল করে ভুয়া রেজুলেশন সৃষ্টি করেছেন ইবনে আমিন।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘টিআর কাবিখার পুরো টাকা আত্মসাৎ, অফিস থেকে ইউপি সচিবকে বের কয়ে দিয়ে অফিসে তালা দেওয়া এবং পরিষদের কম্পিউটারসহ অন্যন্য জিনিস বাড়িতে নিয়ে যাওয়া, শ্রমিকদের নামীয় সব সিম কার্ড নিজ নিয়ন্ত্রণে রাখা, রেজিস্ট্রি অফিস থেকে পাওয়া ১% টাকা আত্মসাৎ, পরিষদের উন্নয়ন তহবিল থেকে ইউপি সদস্য পাখি আক্তারের নাম কেটে ছকিনা আক্তারের নাম সংযুক্ত করে ব্যাংক একাউন্ট থেকে টাকা তুলে আত্নসাৎ করা, ঘূর্ণিঝড় মোখা’য় বরাদ্দ ১টন চাউল আত্মসাৎ, জন্ম নিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদ, ট্রেড লাইসেন্স, প্রত্যয়নপত্র, মৃত্যু সনদসহ সকল কার্যক্রম ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সরিয়ে স্থানীয় কাথরিয়া বাজারের মান্নানের দোকানে মোটা অংকের টাকায় কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা ও ইউনিয়নের হালিয়াপাড়া গ্রামে মডেল মাঠ নির্মাণ ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে সমুদ্র সৈকতের খালি চরকে মাঠ দেখিয়ে সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাৎ।

অনাস্থা প্রস্তাবকারী সদস্যরা হলেন- ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বাদশা মিয়া, ২নং ওয়ার্ডের আনোয়ারুল আজিম, ৩নং ওয়ার্ডের আবু তালেব, ৪নং ওয়ার্ডের রফিক আহমদ, ৭নং ওয়ার্ডের হুমায়ুন কবির চৌধুরী, ৮নং ওয়ার্ডের ছৈয়দ আহমদ, ৯নং ওয়ার্ডের রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নিলোয়ারা বেগম, ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পাখি আক্তার।

অনাস্থা প্রস্তাবের আবেদনকারী ইউপি সদস্য হুমায়ুন কবির চৌধুরী বলেন, ‘ইবনে আমিন চেয়ারম্যান হিসেবে শপথ গ্রহণের পর থেকে তার খেয়াল-খুশিমতো ইউনিয়ন পরিষদের কাজ করে আসছেন। ইউনিয়ন পরিষদে তালা দিয়ে নিজ বাড়িতে পরিষদের কার্যক্রম চালাচ্ছেন। একের পর এক প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করছেন। আমরা পরিষদের মাঠে বসে পরিষদ করতেছি। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়ে আমরা ৯ সদস্যের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে এই অনাস্থা প্রস্তাব দিই এবং তার অপসারণ দাবি করছি।’

এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ইবনে আমিন একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সালিস বিচার থেকে শুরু করে আমার ইউনিয়নকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করে আসছি। আমার সফলতা সাবেক দুই চেয়ারম্যানের সহ্য হচ্ছে না। তারা একেকজন মেম্বারকে ৪ লক্ষ টাকা করে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। আমার কাছেও সব কাগজপত্র আছে। আমিও প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাঈদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘আমার অফিসে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধ অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সূত্র: একুশে পত্রিকা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ