মোঃ মনছুর আলম (এম আলম): চট্টগ্রামের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত উপজেলা বাঁশখালী জনপদটি পূর্ব থেকে বিভিন্ন কারণে অকারণে আলোচিত-সমালোচিত হয়ে আসছে। যেখানে রয়েছে বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম সমূদ্র সৈকত সহ নানা দর্শনীয় স্থান। ইতিমধ্যে বিশ্লেষকরা এটিকে পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় অঞ্চল হিসাবেও দেখেন। এছাড়াও সি,আই,পি ভিআইপি সহ সরকারের উচ্চপদস্থ অনেক কর্মকর্তার জন্মভূমি এ উপজেলা। তবে মাদকে ভাসছে গোটা বাঁশখালী। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শুরু করে ষ্টেশন গুলোতেও চলছে মাদকের রমরমা ব্যবসা। অলি-গলিতে দেখা মেলে মাদকসেবীদের। প্রায়ই তাদের দেখা যায় উশৃঙ্খল মাতলামি পনায়। মাদক সেবন করে মারাত্বক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনাও ভুরিভুরি।
জানা গেছে, উপজেলার গ্রাম ও স্টেশন মিলিয়ে প্রায় বেশকটি পয়েন্টে গাঁজা, ইয়াবা ও চোলাই মদ বিক্রি হয় নিত্যদিন। এ উপজেলা কক্সবাজারের সীমান্ত ও বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় এলাকা হওয়ায় বিভিন্ন কায়দায় হারহামেশা ঢুকছে এসব মাদক। বর্তমানে মাদকসেবীর মধ্যে স্কুল কলেজ পড়ুয়া উঠতি বয়সের তরুণদের সংখ্যা অত্যধিক। মাদকসেবীরা মাদকের অর্থ জোগাড় করতে প্রায়ই চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটাচ্ছে।
এ উপজেলায় মাদক ব্যবসায় তৎপর রয়েছে প্রভাবশালী কয়েকটি সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের বাইরেও ব্যক্তি কেন্দ্রীক এ ব্যবসার রমরমা দিন যাচ্ছে এখন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুটিকয়েক দুষ্টচক্র সিন্ডিকেট ও ব্যক্তি বিশেষের এ মাদক ব্যবসাকে নানা ভাবে উৎসাহ দিচ্ছে। তাদের আস্কারা পেয়েই মাদক সিন্ডিকেট এখন আরো বেপরোয়া। দিন দিন এ ব্যবসায় নতুন মুখের আগমন ঘটছে। মার্কা মারা চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরাই তাদের ব্যবসা বিস্তৃত করার পরিকল্পনায় নতুন মুখের কাছ থেকে অডেল টাকা নিয়ে মাদক ব্যবসাকে বাড় বাড়ন্ত করছে।
এ কৌশলে সবচেয়ে বেশী এগিয়েছে উপজেলার কালীপুরস্থ পালেগ্রাম সদর আমিন হাটের নজির আহমদ প্র: লেড়া মিয়ার স্ত্রী মাদক ব্যাপারী মরিয়ম খাতুন। এই মরিয়ম দীর্ঘ যুগ ধরে বাঁশাখালীর মাদক ব্যবসা শাসন করছে। মাদকের মুকুটহীন সম্রাজ্ঞী মরিয়ম প্রশাসনের অভিযানে গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরণ করলেও এ ব্যবসা ছাড়াতে পারেনি। তার মাদক ব্যবসায় এ পর্যন্ত আইনি সংস্থার বড় কোন অভিযান হয়নি। মাদক সম্রাজ্ঞী মরিয়ম তার এ ব্যবসার নিরাপত্তায় ঘাটে ঘাটে বিশ্বস্থ সোর্স থেকে শুরু করে আইনি সংস্থার কিছু অসাধু সদস্যদেরও ব্যবহার করে। তারা অভিযান কিংবা অন্য কোন ঝামেলার আগাম খবর মাদক সম্রাজ্ঞী মরিয়মকে অবগত করায় সতর্ক বার্তা পেয়ে মাদকের ডেরা থেকে নিরাপদে সরে পড়ে। এই ডেরায় শ্রমিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশার মাদক সেবীদের সমাগম ঘটে। মাদক ব্যবসার পাশাপাশি সম্রাজ্ঞী মরিয়মের বিবাহিত মেয়েকে ঘরে রেখেও দেদারসে চালান দেহ ব্যবসা। সন্ধ্যা হলেই মাদক ও দেহ ব্যবসার ঐ এলাকায় ভূতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এলাকার লোকজন একাধিকবার আইনি প্রশাসন ও স্থানীয় ভাবে মরিয়মকে শায়েস্তা করতে মৌখিক ভাবে অভিযোগ দিলেও এর কোন সুরহা হয়নি। তাদের নীরবতায় মাদক সম্রাজ্ঞী মরিয়ম দিনের পর দিন তার অবৈধ মাদক ও দেহ ব্যবসায় আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হচ্ছে। স্থানীয় সচেতন মহলের কেউ তার এই মাদক ও দেহ ব্যবসার প্রতিবাদ করলে নেমে আসে মৃত্যুর হুমকি। সম্রাজ্ঞী মরিয়ম মাদক ও দেহ ব্যবসার পাশাপাশি কিছু সংখ্যক সন্ত্রসীও লালন-পালন করে। এরাই মাদক ও দেহ ব্যবসার প্রতিবাদকারীদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন থেকে শুরু করে মৃত্যুর বার্তা পৌঁছায় বলে জানা যায়।
গোপন সূত্রে প্রকাশ, মাদক সম্রাজ্ঞী মরিয়মের বিরুদ্ধে বাঁশখালী থানার মাদক মামলা নং- ৩৪(০৩)২৩ থাকলেও এ মামলায় এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রশাসনের গুটিকয়েক অসাধু সদস্যের আস্কারা পেয়েই অবিরাম চলছে মুকুটহীন এই সম্রাজ্ঞী মরিয়মের মাদক ও দেহ ব্যবসা।
মরণ নেশা এই মাদকের আসক্তি হতে রক্ষা করতে ও দেহ ব্যবসা বন্ধ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এসবের বিরুদ্ধে অভিযান সহ জড়িতদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবী জানান এলাকায় বসবাস রত সর্বস্তরের সাধারণ জনগন।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) সুদীপ্ত সরকার পিপিএম জানান, মরিয়মের মাদকের সাথে সম্পৃক্ত থাকার তথ্য আমাদের কাছে আসছে। তাকে হাতেনাতে মাদক সহ আটক করার জন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে।
0 মন্তব্যসমূহ