মো: মনছুর আলম (এম আলম): প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহেনাকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ সহ কটুক্তি করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড হওয়ার মুহুর্তেই চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে জনগণ ক্ষুদ্ধ হলে অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা সহ এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় প্রতিবাদের ঝড় উঠে। দৈনিক যায়যায়দিন এর বরাতে, বিষয়টি চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: কামাল উদ্দিনের দৃষ্টিগোচর হওয়ার সাথে সাথে ২ জুলাই রাতে উপজেলার শেখেরখীলে অভিযান চালিয়ে ১নং ওয়ার্ডের নিমতলা থেকে ঐ এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে অভিযুক্ত আরিফ উদ্দীনকে আটক করেন। এরপর অভিযুক্ত আরিফের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে তথ্য-প্রযুক্তি আইনে মামলা করার বিষয় নিশ্চিত করেন। এদিকে বিডিনিউজ২৪ এর বরাতে, আরিফকে পুলিশ গ্রেপ্তার করার পরদিন সোমবার (৩ জুলাই) উপজেলার সরল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবদুর রশিদ আদালতে একটি মানহানী মামলা করেন। আর এই মামলায় অভিযুক্ত আরিফকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে একই দিনে আদালতে পাঠানো হয় বলে ওসি নিশ্চিত করেন। দ্রুত সময়ে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাঁশখালী থানার ওসি কামাল উদ্দিন সহ পুরো পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদের জোয়ারে ভাসিয়ে দেন নেটিজেনরা। আর এতে ওসি মো: কামাল উদ্দিন হয়ে উঠেন আওয়ামীলীগ ও জনসাধারণের কাছে ভূয়সী প্রশংসার পাত্র।
এসব দৃশ্য লোক দেখানো মাত্র, অথচ বাস্তব চিত্র ভিন্ন। যে যায় লঙ্কায় সে হয় রাবণ, এ ঘটনায় ওসি মো: কামাল উদ্দিনের ভূমিকাও ঠিক তাই। নির্ভরযোগ্য গোপন সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী ও তার বোনকে নিয়ে কটুক্তি করা সেই অভিযুক্ত আরিফকে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করলেও মামলা দেওয়া হয় ২ দিনপর ৪ জুলাই। আর সে মামলাও তথ্যপ্রযুক্তি আইনে নয়, দেওয়া হয় ২০২২ সালের স্থানীয় একটা দাঙ্গাহাঙ্গামার ঘটনার ১১(১২)২২ নম্বর মামলায় (ধারা- ১৪৭/১৪৮/১৪৯/ ৩৪১/৩২৪/৩২৩/ ৩০৭/৩৭৯/৪২৭/৫০৬ দঃ বিঃ তৎসহ ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ৩/৪/৬)। মূল ঘটনায় অভিযুক্ত আরিফের অপরাধ জামিন অযোগ্য হলেও তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয় জামিন যোগ্য অপরাধ দেখিয়ে। শুধু তাই নয়, এই অভিযুক্ত আরিফের সেই ভিডিও ধারণকারী সহ তার পক্ষে কমেন্টকারী মিলে আরো বেশ কয়েকজনকে আটক করা হলেও তাদের কোন হদিস নেই। এককথায় ওসি মো: কামাল উদ্দিনের সাথে মধুর সম্পর্ক রয়েছে এমন অপরাধীদের সাত খুন মাফ করেন তিনি।
শুধু কি তাই, এই ওসি তার অশোভন উক্তি, "মিথ্যাকে সত্য ও সত্যকে মিথ্যা" বানিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানীতেও বড্ড পটু। তার গ্যড়াঁকলে না পড়লে বুঝার উপায় নেই আসলে তিনি রক্ষক না ভক্ষক। এভাবেই আইনের উর্দি জড়িয়ে এই পুলিশ কর্তা তার নিজস্ব আইন জিইয়ে রেখেছে এই উপজেলায়। মোদ্দা কথা ওসি কামালের মগের মুল্লুকের শাসন চলছে পুরো বাঁশখালী জুড়ে। তার এসব অপরাধ যাতে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে না পৌঁছায়, এসবের প্রস্তুতিও আছে তার।
বাঁশখালী আদালত সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত আরিফের বিরুদ্ধে করা ৩ জুলাই মানহানী মামলাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি প্রাপ্তির জন্য অপেক্ষমান। বাঁশখালী থানার ২০২২ সালের ১১(১২)২২ নম্বর মামলায় ৫ দিনের লোক দেখানো রিমান্ড চাইলেও আদালত না মঞ্জুর করেন। বাঁশখালী থানার গোপন সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত আরিফকে আটকের পর আরেকজনকে আটক করলেও তার মোবাইল ফোন জব্দ করে ছেড়ে দেন।
এই ব্যাপারে জানতে বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এমপির মুঠোফোনে সংযোগ না পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। অপরদিকে বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল গফুর বলেন, ঘটনাটি আমাদের নজরে আসার সাথে সাথে পুলিশ প্রশাসন অভিযুক্ত আরিফকে দ্রুত আটক করেন। পরে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান পুলিশের পক্ষ থেকে। সে যেহেতু আইসিটি ধারায় অপরাধ করেছে তাকে আইসিটি মামলায় চালান দেওয়ার কথা। এটি আমার জানা ছিল না, তবে কেন এ ঘটনায় আইসিটি মামলা দেননি সেটা ওসি জানবে।
এ ঘটনার বিষয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আনিছুল হক চৌধুরী বলেন,
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ
রেহেনাকে নিয়ে কটুক্তির বিষয়ে একটি ভিডিও দেখার সাথে সাথে আমরা প্রতিবাদ
করি। পুলিশ প্রশাসন অভিযুক্ত আরিফকে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করে
ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। তবে আমার জানা ছিল না অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যে আইসিটি
মামলা দেয়নি। এখানে তিনি প্রশ্নে রেখে বলেন, সাধারণ জনগণ কিংবা কোন
নেতাকর্মীকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানহানী করলে তার জন্য আইসিটি
মামলা হতে পারলে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বেলায় কেন এমন হল? এদিকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হোসাইন মোহাম্মদ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহেনাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কটুক্তি ও গালমন্দের ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় তথ্য ও প্রযোক্তি আইনে মামলা না হওয়াটা লজ্জার বিষয়। ইতিপূর্বে বিএনপির এক নেতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দেওয়ায় সারাদেশে আন্দোলনের ঝড় উঠে। সেসময় আমাদের এমপি সাহেবও বিশাল শোডাউন করে প্রতিবাদ জানায়। অথচ এমনই এক ঘটনায় আইসিটি মামলা না হওয়াটা রহস্যজনক।
এব্যাপারে জানতে আনোয়ারা- চন্দনাইশ- বাঁশখালী সার্কেল কামরুল ইসলামকে মুঠোফোনে প্রশ্ন করার পরপর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
0 মন্তব্যসমূহ