জড়িত ৬ পুলিশের বিরুদ্ধে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে অভিযোগ
আদালত দায়েরকৃত মামলাটি আমলে নিয়ে বাঁশখালী থানার ওসিকে তদন্তের জন্য দেন নির্দেশ। অপরদিকে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে করা অভিযোগটা দীর্ঘদিন রয়েছে তদন্তে।
বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম সাংবাদিক সংস্থার তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মো: মনছুর আলম বাদী হয়ে বাঁশখালী সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল হামিদ এর আদালতে দায়ের করেন এই মামলা। তার আগে গত ২০২৩ সালের ২২ জুন স্বশরীরে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে এই ঘটনায় জড়িত পুলিশদের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে লিখিত ই-২৯৭ অভিযোগটিও করেন এবং এর একটি অনুলিপি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে জমা দেন তিনি। এই মনছুর বিগত ২০১৮ সালে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে কপিরাইট সনদ পাওয়া অনলাইন গণমাধ্যম বাঁশখালী নিউজ এর সম্পাদক ও প্রকাশক। এবং তিনি জাতীয় পত্রিকায়ও সাংবাদিকতার দায়িত্বে রয়েছেন। এছাড়াও বিভিন্ন অপরাধ ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে রয়েছে তার করা শতশত এক্সক্লুসিভ প্রতিবেদন।
বাদীর আইনজীবীদের মধ্যে অ্যাডভোকেট এইচএম হেলাল উদ্দিন বলেন, শুনানি শেষে আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে বাঁশখালী থানার ওসিকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেন।
মামলা ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত শাহাদাত আলম আওয়ামিলীগের প্রভাবশালী নেতা ও স্থানীয় কালীপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। তার ছত্রছায়ায় থেকে বিবাদীরা এলাকায় বিভিন্নধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। তাদের ক্ষমতার অপব্যবহারের দাপটে স্থানীয় অসহায় লোকজন প্রতিনিয়ত মিথ্যা মামলা সহ হয়রানী ও নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে। এরমধ্যে স্থানীয় কিছু অসহায় মানুষ শাহাদাত আলম এর পক্ষের লোকজনের কাছে মারধর ও হামলার শিকার হলে, সাংবাদিক মনছুর তাদেরকে আইনি পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করায় তৈরি হয় বিরোধ। এর জেরে ঐ নেতার নির্দেশে বিবাদীরা বিভিন্ন সময় নানা কায়দায় বিভিন্ন স্থান থেকে অপহরণ পূর্বক হত্যার চেষ্টা করে আসছিল সাংবাদিক মনছুরকে। একপর্যায়ে রমজান মাসের শেষের দিকে ঈদের আগে কালীপুর এলাকার গুণাগরি খাসমহল বাজার থেকে বাণিগ্রাম এলাকার মো: আজিজকে সাথে নিয়ে তার ব্যবহৃত মোটর সাইকেল হাঙ্ক ডিডি, কক্সবাজার-ল-১১-৫৭৬৩ যোগে বাড়ি ফেরার পথে গত ২০২৩ সালের ১৬ এপ্রিল রাত ১১টা ২০ মিনিটের দিকে ২নং সাধনপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ সাধনপুর এলাকার আরেক আওয়ামী নেতা সাবেক ইউপি সদস্য বিবাদী আব্দুর রহমান প্র: হানিফ প্র: আবু হেনার বাড়ির সামনে শাহাদাত আলম এর নির্দেশনায় মামলার বিবাদীরা অপহরণ করে হত্যার উদ্দেশ্যে লাঠিসোটা দিয়ে এলোপাতাড়ি গণপিটুনি দেয়। পরবর্তীতে ৫ ঘন্টার ব্যবধানে রাত ৩টার একটি কাল্পনিক ঘটনার এজাহার সাজিয়ে মিথ্যা মাদক মামলা দিয়ে প্রকৃত ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ এবং প্রকৃত ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৬ পুলিশের বিরুদ্ধে লিখিত ঐ অভিযোগ দায়ের করেন পুলিশ হেডকোয়ার্টারে। এছাড়াও আরো জানা যায়, অভিযোগটি করার দায়ে ঐ সাবেক ওসি কামাল সহ জড়িত ৬ পুলিশের মধ্যে রামদাস মুন্সির হাট তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক এসআই শহীদের নানা অপকর্ম নিয়ে করা জাতীয় পত্রিকায় ও অনলাইনের প্রতিবেদনে সাংবাদিক মনছুরের বিরুদ্ধে হয় আইসিটি মামলাও। পরবর্তীতে তিনি ঐ মামলার তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে খালাসও পান।
সাংবাদিক মো: মনছুর আলম বলেন, আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনায় জড়িত তৎকালীন সময়ের আওয়ামিলীগের প্রভাবশালী নেতা এবং আওয়ামী সরকারের প্রভাবিত পুলিশ, তাই গুটিকয়েক মিডিয়ায় লেখালেখি হলেও তেমন কোন সাড়া পায়নি। কারণ দেশের অধিকাংশ মিডিয়া তখন লঙ্কায় গিয়ে হয়েছে রাবন। এমনকি দেশ শাসকের দমনপীড়নের প্রথার মূখে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরাও ছিলেন স্বাক্ষী গোপালের ভূমিকায়। এই নাটকীয় ঘটনার ২ মাস পরে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে প্রতিকার চেয়ে শুধুমাত্র জড়িত পুলিশদের বিরুদ্ধে নামকাওয়াস্তে অভিযোগ করতে পারলেও জড়িত আওয়ামিলীগ নেতা ও তার ছত্রছায়ায় থাকা অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কোন প্রতিকার চাওয়া সম্ভব হয়নি। তাই বর্তমানে ন্যয় বিচার পাওয়ার লক্ষ্যে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে বিজ্ঞ আদালতের স্বরনাপর্ন হয়েছি। এছাড়াও এই ঘটনায় সাংবাদিক মনছুরের পেশাগত কাজে এবং ডিজিটাল মার্কেটিং ব্যবসায় বিপর্যয় ঘটে চরমভাবে আর্থিক সংকটের সম্মুখীন সহ মারাত্মক ভাবে সম্মানহানি হয়। এমনকি ঐ নাটকীয় ঘটনায় কাগজপত্র ঠিক থাকার পরও তার ব্যবহৃত গাড়িটা দীর্ঘদিন ধরে মিথ্যা বেড়াজালে ফেঁসে থানা প্রাঙ্গণে পড়ে থেকে লক্কর ঝক্কর হয়ে গেছে বলে জানা যায়।
তিনি সাংবাদিক মহলের উপরে ক্ষোভ ছুড়ে আরো বলেন, আপনাদের মধ্যে যারা নামকাওয়াস্তে বড়বড় চেয়ারে বসে আছেন তারা দয়া করে চেয়ার গুলোতে নির্যাতিত সংবাদকর্মীদের বসান। কেননা সাংবাদিক নির্যাতনে কঠোর হলেই সাধারণ মানুষ থাকবেন নিরাপদে।
এছাড়াও তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে এসে পূর্বের ঘটনায় অনেক মামলা রেকর্ড হচ্ছে, যা বিগত সরকারের আমলে আইনি প্রতিকার পাওয়া আর চাওয়ার মত সুস্থ পরিবেশ ছিল না। এর মধ্যে কিছুকিছু মামলায় কাঙ্ক্ষিত কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে যেমন নিরীহ লোকজন জড়িয়ে পড়ার গুঞ্জন শুনা যাচ্ছে, তেমনি অনেক অপরাধী পার পাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। তাই মামলা তদন্তকালীন সময়ে সঠিক তথ্য সংগ্রহপূর্বক, তা যাচাই-বাছাই করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি একজন মিথ্যা মামলায় ভুক্তভোগী এবং অপরাধীদের হাতে নির্যাতিত হিসাবে বিনীত আহবান জানান সাংবাদিক মনছুর।
0 মন্তব্যসমূহ